ব্রাত্য বসুর প্রয়াত বাবার নাম ঘিরে ভোটার লিস্ট বিতর্ক

ভোটার তালিকা নিয়ে ফের সরগরম রাজ্য রাজনীতি। বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হল রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর (Bratya Basu) প্রয়াত বাবার নাম ঘিরে। অভিযোগ উঠেছে,…

West Bengal Education Department Extends Admission Deadline, Informs Bratya Basu"

ভোটার তালিকা নিয়ে ফের সরগরম রাজ্য রাজনীতি। বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হল রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর (Bratya Basu) প্রয়াত বাবার নাম ঘিরে। অভিযোগ উঠেছে, ১৯৯৯ সালে প্রয়াত প্রখ্যাত নাট্যকার বিষ্ণু বসুর নাম এখনও ২০২৪-২৫ সালের ভোটার তালিকায় রয়ে গিয়েছে। এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করে সোমবার সল্টলেক থেকে সংবাদমাধ্যমের সামনে বিজেপি নেতা পীযূষ কানোরিয়া নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তোলেন।

বিজেপির দাবি, “একদিকে সরকার দাবি করছে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, অন্যদিকে ২৫ বছর আগে প্রয়াত একজন নাগরিকের নাম আজও ভোটার তালিকায় রয়েছে। এটা প্রমাণ করে নির্বাচন কমিশনের কাজের মধ্যে গাফিলতি আছে।” বিজেপির পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, মৃতদের নাম তালিকায় রাখা মানেই ভোটে কারচুপির সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে।

   

যদিও বিজেপির এই অভিযোগে কার্যত ঝাঁজালো জবাব দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সোমবার বলেন, “ব্রাত্য বসুর বাবা প্রয়াত হয়েছেন অনেক আগেই। তাঁর নামে তো কেউ ভোট দেয়নি। আর ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার দায়িত্ব একান্তই নির্বাচন কমিশনের।” কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, “বিজেপি রাজনৈতিক ইস্যু তৈরির জন্য ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে। মৃত ব্যক্তির নামে কেউ ভোট দিতে গেলেই তো বিরোধী এজেন্টরাই তা ধরিয়ে দেবে।”

কুণাল ঘোষ আরও বলেন, “ব্রাত্য বসুর বাবা ছিলেন এলাকার বিশিষ্ট নাগরিক। এমন মানুষকে নিয়ে বিজেপি রাজনৈতিক ইস্যু খাড়া করছে, এটা নিন্দনীয়। এখানে কমিশনের ব্যর্থতাই দায়ী।”

অন্যদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এদিন ফের ভোটার তালিকা ও SIR (Systematic Voter List Revision) ইস্যুতে সরব হন। সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি স্পষ্ট দাবি করেন, “No SIR, No Election।” শুভেন্দুর কথায়, “যদি ভোটার তালিকা সঠিকভাবে সংশোধন না হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ন্যায্য ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। বিজেপি এটা বরদাস্ত করবে না।”

Advertisements

রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, মৃতদের নাম ভোটার তালিকায় রয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু যেহেতু এটি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বাবার নামকে কেন্দ্র করে ঘটেছে, তাই বিজেপি বিষয়টিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। অপরদিকে তৃণমূল কমিশনের গাফিলতির দিকে আঙুল তুলে দায় এড়াতে চাইছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একদিকে বিজেপি ভোট কারচুপির সম্ভাবনা নিয়ে সরব হচ্ছে, অন্যদিকে তৃণমূল এটিকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলে তুলে ধরছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা হারালে ভোট গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই প্রশ্নের মুখে পড়বে। তাই দ্রুত মৃত ব্যক্তিদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া আরও কড়া করা প্রয়োজন।

ব্রাত্য বসুর প্রয়াত বাবার নাম ভোটার তালিকায় থাকা নিয়ে যে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে, তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে আগামী নির্বাচনের আগে বিরোধীরা প্রতিটি সুযোগকে ইস্যু বানাতে চাইছে। তৃণমূলও পালটা আক্রমণে বিজেপিকে নিশানা করছে। তবে মূল প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—নির্বাচন কমিশন কতটা দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি করতে পারবে কি না।