ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রতারণার ঘটনা যেন দিন দিন বাড়ছেই। কখনও অনলাইন লোন, কখনও ফিশিং লিঙ্ক, আবার কখনও পরিচিত জনের নাম ব্যবহার করে ভুয়ো প্রোফাইল খোলা—এরকম অসংখ্য উদাহরণ ছড়িয়ে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই তালিকায় এবার নাম জুড়ল বাম নেতা ও সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য-এর (Bikash Ranjan Bhattacharya)।
শনিবার সকালে নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সতর্কবার্তা জারি করেন তিনি। বিকাশরঞ্জন লিখেছেন— “আমার নামে একটা ফেক প্রোফাইল করে বিভিন্ন জনের কাছে বন্ধুর অনুরোধ করা হচ্ছে। কেউ ই ঐ অনুরোধ গ্রাহ্য করবেন না। জালিয়াতরা বিভিন্ন ভাবে চক্রান্ত করছে। শুভানুধ্যায়ীরা সজাগ থাকুন।”
Bikash Ranjan Bhattacharya: ভুয়ো প্রোফাইলের ফাঁদ
ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে বহু পরিচিত ব্যক্তিত্বের নামে নকল অ্যাকাউন্ট খোলার ঘটনা নতুন নয়। অনেক সময় সেইসব প্রোফাইল থেকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠিয়ে শুরু হয় প্রতারণার খেলা। প্রথমে সাধারণ আলাপচারিতা, পরে কখনও আর্থিক সাহায্যের আবেদন, কখনও কোনও সন্দেহজনক লিঙ্ক শেয়ার করা—এভাবেই ফাঁদে ফেলা হয় সাধারণ মানুষকে।
সাংসদ বিকাশরঞ্জনের (Bikash Ranjan Bhattacharya) ক্ষেত্রে ঠিক কী উদ্দেশ্যে ভুয়ো প্রোফাইলটি তৈরি হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে রাজনৈতিক মহল ও শুভানুধ্যায়ীরা মনে করছেন, এ এক ধরনের সাইবার চক্রান্ত। কেউ কেউ বলছেন, তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করা বা সমর্থকদের বিভ্রান্ত করাই হতে পারে মূল উদ্দেশ্য।

সতর্কবার্তায় প্রতিক্রিয়া
সাংসদের পোস্ট ঘিরে ইতিমধ্যেই নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বহু মানুষ মন্তব্য করে তাঁকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। অনেকে লিখেছেন, “সচেতন করার জন্য ধন্যবাদ”, আবার কেউ কেউ জানিয়েছেন যে এরকম ভুয়ো প্রোফাইল থেকে তাঁদের দিকেও অনুরোধ এসেছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ মানুষের উচিত সবসময় এ ধরনের অনুরোধ আসলে যাচাই করে নেওয়া। প্রোফাইলটি কবে খোলা হয়েছে, ক’জন বন্ধু আছে, কী ধরণের পোস্ট রয়েছে—এসব খুঁটিনাটি খেয়াল করলেই প্রায়শই ভুয়ো প্রোফাইল চেনা যায়।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতারণা আটকাতে হলে প্রাথমিকভাবে সতর্ক থাকা জরুরি।
- কোনও অচেনা লিঙ্কে ক্লিক না করা।
- ব্যক্তিগত তথ্য (ব্যাঙ্কের ডিটেলস, আধার, ওটিপি) কোনও অবস্থাতেই শেয়ার না করা।
- কোনও সন্দেহজনক প্রোফাইল দেখলে সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করা।
- প্রয়োজনে সাইবার ক্রাইম সেলে অভিযোগ জানানো।
তাঁদের মতে, পরিচিত রাজনীতিবিদ, শিল্পী, সাংবাদিক বা অন্যান্য জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের নামে ভুয়ো প্রোফাইল বানানো এখন প্রতারণার সহজতম অস্ত্র। কারণ, সাধারণ মানুষ নাম দেখে বিশ্বাস করে ফেলেন।
রাজনৈতিক বার্তা
ঘটনাটি নিয়ে সিপিএম মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দলের এক নেতা বলেন, “রাজনীতির ময়দানে আজকাল কুৎসা ও ভুয়ো প্রচারের খেলা বাড়ছে। ডিজিটাল জগতে এরকম ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি করা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষেরও কৌশল হতে পারে। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” অন্যদিকে বিরোধীরা পাল্টা দাবি করছে, “সবকিছু রাজনীতির চশমায় দেখা ঠিক নয়। এটা নিছক সাইবার প্রতারণা হতে পারে।”
সামাজিক প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব এতটাই গভীর যে একবার কোনও বিভ্রান্তিমূলক বার্তা ছড়িয়ে পড়লে সেটি থামানো কঠিন। ভুয়ো প্রোফাইলের মাধ্যমে কোনও ভুল তথ্য ছড়ালে তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয় এবং অনেক সময় হিংসাত্মক পরিস্থিতিও জন্ম নেয়। বিকাশরঞ্জনের (Bikash Ranjan Bhattacharya) ঘটনা তাই শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রতারণা নয়, বরং সামাজিক নিরাপত্তার সঙ্গেও যুক্ত।
বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের (Bikash Ranjan Bhattacharya) নাম ভাসিয়ে প্রতারণার চক্রান্ত নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। তাঁর সতর্কবার্তা আবারও মনে করিয়ে দিল যে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অন্ধভাবে বিশ্বাস করা বিপজ্জনক। একদিকে যেমন রাজনৈতিক নেতাদের ভাবমূর্তি আঘাত পাচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষও ফাঁদে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। না হলে প্রতিদিনই নতুন নতুন ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি হবে, আর প্রতারকরা আরও সাহসী হয়ে উঠবে।