দমদমের জনসভা ঘিরে শুক্রবার তৈরি হয়েছিল বিশেষ রাজনৈতিক উত্তেজনা। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে বিজেপির কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন একাধিক কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরের নেতৃত্ব। এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর উচ্ছ্বাস প্রকাশ পায় তাঁর বক্তব্যের মধ্য দিয়েও। তিনি বলেন, “বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাংলার মানুষ আশায় তাকিয়ে আছেন তাঁর দিকেই। কেবল তিনিই পারবেন এই রাজ্যকে অনুপ্রবেশকারীর অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে।”
শুভেন্দু এদিন কড়া ভাষায় তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন সরকার মানুষের আস্থা হারিয়েছে। দুর্নীতি, কাটমানি, সন্ত্রাস ও অনুপ্রবেশ— সব কিছুর জন্য দায়ী রাজ্যের শাসকদল। তাই বাংলাকে রক্ষা করতে তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে হটাতেই হবে। শুভেন্দুর দাবি, বিজেপিই একমাত্র বিকল্প শক্তি, যারা বাংলাকে উন্নয়ন ও সুশাসনের পথে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম।
শুভেন্দুর পর মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠে রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও একই সুরে সরব হন। তাঁর কথায়, “উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একসঙ্গে ভোট দেবেন সিপিএম, কংগ্রেস এবং তৃণমূল। এর মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে যায়, বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস আসলে বাম ও কংগ্রেসেরই সহযোগী শক্তি। বিজেপির বিরুদ্ধে সবাই মিলে ফ্রন্ট তৈরি করছে।”
শমীক কটাক্ষ করে বলেন, “কলকাতার রাস্তায় মিছিল করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মহম্মদ সেলিম। অথচ বাংলার সাধারণ মানুষ বুঝে গিয়েছেন, এসব আসলে তামাশা ছাড়া কিছু নয়। বাংলার মানুষ চায় পরিবর্তন, আর সেই পরিবর্তনের বার্তাই আজ দমদমের সভা থেকে উঠে আসছে।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতির বক্তব্যে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে উদ্বাস্তু হিন্দু ও সংখ্যালঘু মুসলিমদের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “যতদিন বিজেপি থাকবে, কোনওদিন বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা হিন্দুদের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না কেউ। একইভাবে কোনও ভারতীয় মুসলিমকেও কেউ ছুঁতে পারবে না। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, নাগরিক হিসেবে সকলের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব আমাদের।”
তাঁর দাবি, তৃণমূলের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য করে তিনি সাফ বার্তা দেন, “ছাব্বিশে কোনও শক্তি তৃণমূলকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পারবে না। বাংলার মানুষ ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।”
দমদমের জনসভায় শুভেন্দু-শমীকের এই আক্রমণাত্মক অবস্থান রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে চর্চার জন্ম দিয়েছে। বিজেপি একদিকে যেমন মোদীর জনপ্রিয়তাকে সামনে রেখে ভোটে সুবিধা নিতে চাইছে, তেমনি অন্যদিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনুপ্রবেশ এবং ভোট লুটের অভিযোগকে হাতিয়ার করছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপি এখন থেকে সরাসরি মোদী-ফ্যাক্টরকে সামনে এনে বাংলার ভোটারদের আকৃষ্ট করার কৌশল নিয়েছে। শুভেন্দুর বক্তব্যে যেমন বারবার মোদীর নাম উচ্চারিত হয়েছে, তেমনি শমীকও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে বিজেপি-ই একমাত্র দল যারা উদ্বাস্তু ও সংখ্যালঘু— উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অন্যদিকে, বিজেপির এই সভার পাল্টা দিতে ইতিমধ্যেই তৃণমূলও নিজেদের প্রস্তুত করছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, আগামী কয়েক মাস ধরে বাংলার আকাশ জুড়ে শাসক-প্রতিপক্ষের এই তীব্র বাকযুদ্ধই রাজনীতির মূল সুর হয়ে থাকবে।