দিল্লিতে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী এবং বিরোধীদলের অন্যান্য সাংসদের হেনস্তার ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার কলকাতার রাস্তায় নেমে এল প্রদেশ কংগ্রেস। রাজভবনের উদ্দেশে পদযাত্রা ও প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল আগেই। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী এদিন দুপুরে শহরের প্রাণকেন্দ্রে জড়ো হন শতাধিক কংগ্রেস নেতা-কর্মী। হাতে পোস্টার, ব্যানার ও তিরঙ্গা পতাকা— স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা।
প্রদেশ কংগ্রেসের দাবি, দিল্লিতে সংসদের ভেতরে ও বাইরে বিরোধী কণ্ঠস্বর দমন করতে বিজেপি সরকার ও দিল্লি পুলিশ ‘বর্বর আচরণ’ করেছে। সাংসদ রাহুল গান্ধী-সহ বিরোধী সাংসদদের সঙ্গে যে অসদাচরণ করা হয়েছে, তা গণতন্ত্রের জন্য লজ্জাজনক। এই ঘটনার প্রতিবাদেই রাজভবনের উদ্দেশে মিছিল করেন তাঁরা। মিছিলের নেতৃত্ব দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন একাধিক জেলা নেতৃত্ব ও যুব কংগ্রেস, মহিলা কংগ্রেসের কর্মীরা।
শহরের ব্যস্ততম চত্বর পার হওয়ার সময়ই শুরু হয় উত্তেজনা। পুলিশের পক্ষ থেকে আগে থেকেই ব্যারিকেড বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যাতে তাঁরা নির্ধারিত রুট মেনে এগোন এবং ট্র্যাফিক ব্যাহত না হয়। কিন্তু কংগ্রেস কর্মীরা ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ না করলেও, জোর করে মিছিল ঠেকানোর চেষ্টা করে।
সেখানেই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বহু কর্মী মাটিতে বসে পড়েন এবং স্লোগান তুলতে থাকেন— “গণতন্ত্র বাঁচাও, বিজেপি হটাও”। রাজভবনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করতেই পুলিশ কর্মীদের প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, কয়েকজন কর্মীকে কাঁধে করে টেনে তোলা হয় ভ্যানে। আটক হওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, মহিলা কংগ্রেস নেত্রী, যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি-সহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা।
ঘটনাস্থলে কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, “দিল্লিতে সাংসদদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা বিজেপির গণতন্ত্র-বিরোধী মানসিকতার প্রমাণ। আজ কলকাতায় আবার সেই কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হল। আমরা ভয় পাব না, আন্দোলন চলবেই।” প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এভাবে গ্রেফতার করে আন্দোলন থামানো যাবে না। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে দিল্লি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সাংসদদের হেনস্তার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং দায়ী পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
পুলিশ সূত্রের দাবি, শহরের কেন্দ্রস্থলে আচমকা বিপুল জমায়েতের ফলে যান চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটে। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এবং জনসাধারণের অসুবিধা এড়াতে কর্মীদের আটক করা হয়েছে। আটকাদের মধ্যে বেশিরভাগকে হেয়ার স্ট্রিট থানা ও নিউ মার্কেট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁদের অনেককেই ব্যক্তিগত বন্ডে মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম-সহ বিরোধী দলগুলি বিজেপি সরকারের ‘অসহিষ্ণু মনোভাব’-এর নিন্দা করেছে। তাঁদের মতে, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করে গণতন্ত্রকে বিপন্ন করা হচ্ছে।
এদিনের এই রাজভবন অভিযান ও গ্রেফতারের ঘটনায় শহরে তৈরি হয় তীব্র চাঞ্চল্য। কর্মসূচি শেষে প্রদেশ কংগ্রেস ঘোষণা করেছে, এই আন্দোলন শুধু কলকাতায় নয়, রাজ্যের প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আগামী কয়েকদিন ধরে থানা ঘেরাও, মিছিল ও পথসভা চলবে। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার যতক্ষণ না বিরোধী সাংসদদের অপমানের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইছে, ততক্ষণ আন্দোলন জারি থাকবে।
শহরের সাধারণ মানুষও এই ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ পুলিশের ভূমিকা সমর্থন করেছেন, আবার অনেকে মনে করছেন, প্রতিবাদের অধিকার গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তা দমন করা ঠিক নয়। ফলে দিল্লির ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই আন্দোলন আগামী দিনে রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।