গতকাল ঘটে গেছে ডবল ধামাকা। বিজেপির কংগ্রেস (Congress) কার্যালয় আক্রমণ করার পর তাদের সমবেদনা জানাতে যায় বাংলাপক্ষ। সেখানেই কংগ্রেসের কয়েকজন হিন্দিভাষী নেতার হাতে আক্রান্ত হয় বাংলাপক্ষের গর্গ চ্যাটার্জী এবং কৌশিক মাইতি। তারপরে অনেক জল গড়িয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার অফিসিয়ালি জানিয়েছিলেন কোনো ভাষাকেই ছোট করার অধিকার কারুর নেই।
কংগ্রেসের আরেক নেতা প্রমোদ পাণ্ডে আজ বিজেপি ঢঙে বাংলাপক্ষকে আক্রমণ করেছেন । বাংলাপক্ষ অভিযোগ করেছে গতকাল তিনিও বাংলাপক্ষকে আক্রমণ করেছিলেন। আজ একটি ভিডিও বার্তায় তিনি জানিয়েছেন জাতি জাতি বিদ্বেষী মন্তব্যের জন্যই আক্রান্ত গর্গ। প্রমোদ বলেন বিধানভবনে ঢুকে হিন্দিভাষী নেতাদের অগ্রাহ্য করেন গর্গ এবং কৌশিক।
তাতেই খেপে যান ওই হিন্দিভাষী নেতারা। প্রমোদ গর্গকে জিজ্ঞেস করেছেন SSC দুর্নীতির ব্যাপারে। কেন বাংলায় আট হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে তাও তিনি মমতা বন্দোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করতে বলেছেন।
বাংলাপক্ষের অভিযোগ, গতকাল প্রমোদ পাণ্ডে সহ কংগ্রেসের হিন্দিভাষী নেতারা তাদের উপর শারীরিক নিগ্রহ করেছেন । আজ একটি ভিডিও বার্তায় প্রমোদ পাণ্ডে বলেন, “গর্গ চ্যাটার্জী এবং কৌশিক মাইতি বিধানভবনে ঢুকে হিন্দিভাষী নেতাদের অগ্রাহ্য করেছেন এবং জাতিবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন।
এই উসকানির কারণেই হিন্দিভাষী নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের উপর হামলা চালিয়েছেন।” তিনি আরও বলেন, “গর্গের এই ধরনের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি যদি সত্যিই বাংলার জন্য কাজ করতে চান, তবে তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি, যেমন এসএসসি কেলেঙ্কারি, বা রাজ্যে ৮,০০০ স্কুল বন্ধ হওয়ার বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করুন।”
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে গতকালের বিজেপির হামলা গুরুত্বপূর্ণ। বিহারের দারভাঙায় রাহুল গান্ধীর ‘ভোটাধিকার যাত্রা’র মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর প্রয়াত মায়ের বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্যের প্রতিবাদে বিজেপি কর্মীরা কংগ্রেস কার্যালয়ে হামলা চালায়। এই ঘটনার পর বাংলাপক্ষ সমবেদনা জানাতে গেলে তাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে।
বাংলাপক্ষের মুখপাত্র বলেন, “আমরা কংগ্রেসের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিলাম, কিন্তু তাদের হিন্দিভাষী নেতারা আমাদের বাঙালি পরিচয় নিয়ে আক্রমণ করেছেন। প্রমোদ পাণ্ডে এই হামলায় সরাসরি জড়িত ছিলেন।”প্রমোদ পাণ্ডের এই মন্তব্য বিজেপির সুরের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংযত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা সকল ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখাই। এই ঘটনার তদন্ত হবে, এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে, বাংলাপক্ষের অভিযোগ, কংগ্রেসের এই বিবৃতি কেবল আনুষ্ঠানিকতা, এবং দলের অভ্যন্তরীণ হিন্দিভাষী নেতারা বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন।
গর্গ এই হামলাকে ‘বাঙালি বিরোধী মানসিকতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে ভাষাগত ও জাতিগত বিভেদের ইস্যুকে আরও জটিল করে তুলেছে। আগামী নির্বাচনের আগে এই ঘটনা রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।