প্রশাসনের ব্যস্ততা, দফতর সামলানো, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা—এই সমস্ত কিছুর মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বরাবরই নিজেকে প্রকাশ করেছেন এক সৃষ্টিশীল লেখক, কবি ও সুরকার হিসেবে। কবিতা থেকে গান, আর গান থেকে বই—তাঁর রচনার বহর বিস্তৃত। ইতিমধ্যেই তাঁর লেখা একাধিক বই রাজ্যের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা রাজ্যের শিক্ষাদপ্তরের উদ্যোগে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
তবে এবার তিনি তাঁর সৃষ্টিশীলতাকে রাজনৈতিক বার্তার হাতিয়ার করলেন।(Mamata Banerjee) ঝাড়গ্রামের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে এনআরসি নিয়ে সরাসরি গান লিখে প্রতিবাদ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ছি…ছি…ছি এনআরসি…এই গানটা আমি লিখছি।” মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে উচ্চারিত এই কথার মধ্যেই যেন লুকিয়ে ছিল তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান, প্রতিবাদ এবং জনসচেতনতামূলক বার্তা।
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রামে পৌঁছে পাঁচমাথা মোড় পর্যন্ত এক বিশাল মিছিলের (Mamata Banerjee) নেতৃত্ব দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, ক্রীড়া ও বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসসহ অন্যান্য নেতৃত্ব। মিছিল শেষে পাঁচমাথা মোড়ে আয়োজিত পথসভায় তিনি প্রথমেই আক্রমণ করেন পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারকে। তিনি বলেন, “একসময় ঝাড়গ্রাম ছিল আতঙ্কের জায়গা। মানুষ এখানে আসতে ভয় পেত। গোয়ালতোড়, বেলপাহাড়ি, ঝাড়গ্রামে অস্ত্র ও রক্তের রাজত্ব ছিল। আমি কিন্তু তখনও এখানে এসেছি। ক্ষমতায় আসার পরই শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, “তৃণমূল সরকার ঝাড়গ্রামের মানুষের পাশে থেকেছে। এখানে উন্নয়ন হয়েছে, রাস্তা হয়েছে, হাসপাতাল হয়েছে, স্কুল হয়েছে, কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। শান্তি ফিরেছে।”
তবে সভার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এনআরসি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর(Mamata Banerjee) সুর চড়ানো। এই ইস্যুতে তিনি আগেও একাধিকবার প্রতিবাদ জানিয়েছেন, কিন্তু এবার তিনি গানের ভাষায় প্রতিবাদের মাধ্যম খুঁজে পেলেন। তাঁর এই বক্তব্য স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়, এনআরসি ইস্যুতে তিনি আর শুধু প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক বার্তা দিতে চান না—তিনি চান মানুষের মনকে ছুঁয়ে যাওয়া, মানুষের ভয় দূর করা।
মুখ্যমন্ত্রীর(Mamata Banerjee) মতে, এনআরসি এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র, যা সাধারণ মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে পারে। এর মাধ্যমে বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইছে বিজেপি সরকার। তিনি বলেন, “আমরা এনআরসি করতে দেব না। আমার রাজ্যে সবাই শান্তিতে থাকবে। মানুষকে ভয় দেখিয়ে ভোট নেওয়ার রাজনীতি আমরা মানি না।”
মমতার এই সৃষ্টিশীল প্রতিবাদ নতুনভাবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, মানুষকে প্রভাবিত করতে তিনি নতুন পথ নিচ্ছেন—সাহিত্য ও সঙ্গীতকে হাতিয়ার করে গণচেতনা জাগাতে চাইছেন। তাঁর লেখা গান সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে দলের সাংস্কৃতিক শাখা ইতিমধ্যেই উদ্যোগ নিচ্ছে।
একজন মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) কণ্ঠে যখন প্রতিবাদের ভাষা গান হয়ে ওঠে, তখন তা শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য থাকে না, হয়ে ওঠে এক সামাজিক বার্তা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) এই উদ্যোগ সেই কারণেই রাজনৈতিক কৌশলের বাইরেও এক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাজনীতির মঞ্চ ছাড়িয়ে, মানুষের হৃদয়ে পৌঁছনোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর এই গান আগামী দিনে তৃণমূলের ‘প্রতিরোধের সুর’ হয়ে উঠবে কি না, তা বলবে সময়। তবে এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতির অন্যতম চর্চিত বিষয় নিঃসন্দেহে মমতার “ছি…ছি…ছি এনআরসি” গান।