আরজি কর হাসপাতালের নার্স তিলোত্তমা দে’র খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে আদালত সোমবার আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছে। তবে এই রায় নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নিজের মন্তব্যে জানান, ‘‘ফাঁসি হলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।’’
এটি একটি দীর্ঘ এবং আলোচিত মামলা, যা সমাজে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সঞ্জয় রায়, যিনি তিলোত্তমাকে খুন ও ধর্ষণ করেছে, তাকে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। তবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, সঞ্জয়ের মতো নরপিশাচদের জন্য চরমতম শাস্তি হওয়া উচিত ছিল, এবং সেই শাস্তি যদি ফাঁসির রায় হতো, তবে তাকে কিছুটা মনস্তাত্ত্বিক শান্তি মিলত।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম দিন থেকেই এই মামলার মধ্যে দোষীকে কঠিন শাস্তি দেওয়ার পক্ষ ছিলেন। তিনি বারবার দাবি করেছেন, ‘‘ফাঁসি হতে হবে’’। তাঁর বক্তব্য ছিল, এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধে ফাঁসি ছাড়া কোনও শাস্তি যথার্থ নয়। তিনি বলেন, “আমরা ৫৪ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ফাঁসির অর্ডার করিয়ে দিয়েছি। এই কেসে আমাদের ফাঁসির দাবি সকলের ছিল। সেক্ষেত্রে বিচারের রায় নিয়ে কিছু বলব না। আমাদের হাতে কেস থাকলে অনেকদিন আগেই ফাঁসির অর্ডার করিয়ে দিতে পারতাম।’’
তবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতার এই ক্ষোভের পেছনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। ২০১৯ সালে এই হত্যার ঘটনার পর, প্রথমে কলকাতা পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু কিছু দিন পরই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্ত সিবিআই-এর হাতে চলে যায়। সেই সময়ই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয় নিয়ে তাঁর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি একাধিকবার বলেন, ‘‘আমি মা-বাবাকে বলেছিলাম সময় দিন, তারপর না হলে সিবিআই দিতেন। কিন্তু তার আগেই সিবিআই-এর হাতে চলে গেল তদন্তভার।’’
এছাড়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই-এর কাজ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘যে সন্দেহভাজন কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছে, সিবিআই তাদের পরে নতুন করে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।’’ এর মধ্যে একরকম অপ্রতুলতা বা অবহেলার অভিযোগও ছিল মমতার মন্তব্যে।
এদিকে, মামলার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে সঞ্জয়ের আইনজীবী মৃত্যুদণ্ডের বিপরীতে সংশোধনের সুযোগ চেয়েছিলেন, তবে আদালত এই ব্যাপারে কোনও প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
সামগ্রিকভাবে, আরজি কর কাণ্ডের রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। একজনের মতে, সঞ্জয়ের মতো অপরাধীর শাস্তি শুধু মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে সম্ভব, অন্যদিকে তিলোত্তমার পরিবার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মামলায় আরও কঠিন শাস্তি দাবি করছেন।