রাজ্যের নতুন প্রকল্প শুরু অগস্টে, কারা পাবেন সুবিধা?

পাড়ায় জল নেই, রাস্তার পাশে নিকাশি নেই, স্কুলের ছাদ চুঁইয়ে পড়ছে জল, কিংবা গ্রামীণ এলাকায় ছোটখাটো পরিকাঠামোগত সমস্যা—এমন বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় রাজ্যের সাধারণ…

Mamata Banerjee hindi s[eech controversy

পাড়ায় জল নেই, রাস্তার পাশে নিকাশি নেই, স্কুলের ছাদ চুঁইয়ে পড়ছে জল, কিংবা গ্রামীণ এলাকায় ছোটখাটো পরিকাঠামোগত সমস্যা—এমন বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় রাজ্যের সাধারণ মানুষকে। এই সমস্ত ক্ষুদ্র অথচ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন এক অভিনব কর্মসূচি—“আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান”।

এই কর্মসূচির মাধ্যমে এবার রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকাতেও প্রশাসনের সরাসরি উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। মানুষের দরজায় সরকার পৌঁছে যাবে—এই প্রতিশ্রুতির উপর ভিত্তি করে ২ অগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে এই কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আওতায়, প্রতিটি অঞ্চলে পাড়ায় পাড়ায় হবে সরকারি ক্যাম্প, যেখানে এলাকার মানুষ তাঁদের সমস্যা ও অভিযোগ সরাসরি জানাতে পারবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিকদের।

   

কীভাবে কাজ করবে এই কর্মসূচি?

রাজ্যের প্রতিটি তিনটি বুথকে মিলিয়ে গঠিত হবে একটি সেন্টার। প্রতিটি বুথের জন্য সরকার ১০ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ করবে। এর ফলে গোটা কর্মসূচিতে প্রাথমিকভাবে খরচ হবে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এটি কোনো বড় প্রকল্প নয়—বরং একেবারে গোড়ার স্তরের ছোট সমস্যার দ্রুত সমাধান করাই এর মূল উদ্দেশ্য। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “এটা একটা ছোট্ট কর্মসূচি। স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রেখেই কাজ করতে হবে।”

প্রত্যেক অঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় তৈরি হবে প্রশাসনিক ক্যাম্প। যেখানে নির্দিষ্ট দিনে উপস্থিত থাকবেন সরকারি অফিসাররা, স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা এবং প্রয়োজন হলে জনপ্রতিনিধিরাও। সাধারণ মানুষ এসে সরাসরি তাঁদের সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। এরপর সেই সমস্যাগুলির গুরুত্ব অনুযায়ী দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

নজরদারি ও মনিটরিং

এই প্রকল্প যাতে যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়, সেজন্য রাজ্যস্তরে তৈরি করা হবে বিশেষ টাস্ক ফোর্স। এই টাস্ক ফোর্স সমস্ত জেলার কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে। কোথায় কী সমস্যা আসছে, কোথায় কোন প্রকল্প ঠিকঠাক এগোচ্ছে না—সবই নজরে রাখবে এই মনিটরিং টিম।

Advertisements

সরকার চাইছে, মানুষ যাতে বারবার প্রশাসনের দ্বারে না ঘোরেন। বরং সরকারই তাঁদের দরজায় পৌঁছে যাক। ঠিক যেমনটা আগে “দুয়ারে সরকার” বা “দিদিকে বলো”-র মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছেছিল প্রশাসন, এবার তারই পরবর্তী ধাপ হিসেবে সামনে এল “আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান”।

মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা

এই কর্মসূচির উদ্বোধনের সময় মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে—“মানুষের কথা মন দিয়ে শুনতে হবে। কোনো পক্ষপাতিত্ব চলবে না। স্থানীয় রাজনৈতিক চাপের কাছে মাথা নোয়ানো চলবে না। নিরপেক্ষ এবং মানবিক হতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এটা কোনও বড় কর্মসূচি নয় বলেই বলছি, কিন্তু মানুষের কাছে এর গুরুত্ব অনেক। কারণ আমাদের পাড়ার ছোট সমস্যাগুলোই বড় অসুবিধা তৈরি করে। তাই আমাদের সমাধান পাড়াতেই।”

এই উদ্যোগ রাজ্যবাসীর মধ্যে এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে। প্রশাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপে বহু পুরনো সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ছোট থেকে মাঝারি পরিসরের সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান যদি বাস্তবে সম্ভব হয়, তাহলে এই প্রকল্প সত্যিই রাজ্যের প্রশাসনিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।