কলকাতার একেবারে প্রাণকেন্দ্রে, পার্ক স্ট্রিটের (Park Street) সেই চিরচেনা আলো, সুর, আর আনন্দে নতুন এক মাত্রা যোগ হতে চলেছে এবার। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই বছরের বড়দিন (Christmas) উৎসব, যা এবছর আরও প্রাণবন্ত এবং আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। ১৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া এই ক্রিসমাস কার্নিভাল, কলকাতার অ্যালেন পার্কে অনুষ্ঠিত হবে এবং ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। উৎসবটির উদ্বোধন করবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং এতে সঙ্গী হবে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান খাবার এবং বিভিন্ন আকর্ষণীয় আয়োজন।
এই বছর পার্ক স্ট্রিট, অ্যালেন পার্ক, সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্চ এবং সংলগ্ন এলাকা আলোকমালায় সাজানো হবে। এছাড়া, বো ব্যারাকও আলোকিত করা হবে উৎসব উপলক্ষে। ১৯ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে এই আলোকসজ্জা দেখতে পারবেন কলকাতাবাসী এবং পর্যটকরা।
পশ্চিমবঙ্গের তথ্য সংস্কৃতি এবং পর্যটন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গত ২০১১ সাল থেকে ক্রিসমাস উৎসব পালন করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে উৎসাহিত করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। এবারও সেই ধারাবাহিকতায় অ্যালেন পার্কের খ্রিস্টান সম্প্রদায় উৎসবে অংশগ্রহণ করবে। মন্ত্রী জানান, “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার”—এমন দর্শনকে সামনে রেখেই রাজ্য সরকারের এই বিশেষ উদ্যোগ, যা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। মন্ত্রী আশা করছেন, এই বছর বিশেষ করে বিদেশির সংখ্যা বাড়বে যারা পার্ক স্ট্রিট ও বো ব্যারাক এলাকায় শহর পরিক্রমা করবেন।
এবারের উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, ২০ ডিসেম্বর শিল্পী রেমো ফার্নান্ডেজের গানের অনুষ্ঠান। রেমো ফার্নান্ডেজের গানে পার্ক স্ট্রিটের ঝলমলে আলোর মাঝে এক বিশেষ সুরভিত পরিবেশ তৈরি হবে, যা কলকাতার বড়দিন উৎসবকে আরও আনন্দময় এবং স্মরণীয় করে তুলবে।
কলকাতার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উদ্যোগে প্রতি বছরই অ্যালেন পার্কে বড়দিনের উৎসব আয়োজিত হয় এবং এটি এক বিশাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এবার ১৪তম বছর পূর্ণ হচ্ছে। কলকাতা পুরসভা, কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর এই উৎসবের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে। উৎসবটি শুধু কলকাতার কেন্দ্রস্থলে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং রাজ্যের নানা জায়গাতেও এর ছোঁয়া পৌঁছাবে। দার্জিলিং, কালিম্পং, শিলিগুড়ি, আসানসোল, জলপাইগুড়ি, চন্দননগর, ব্যান্ডেল, কৃষ্ণনগর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, আলিপুরদুয়ার, হাওড়া, এবং বিধাননগরের বিভিন্ন চার্চগুলোও সাজানো হবে বড়দিনের আনন্দে।
রাজ্য সরকারের পর্যটন দপ্তরের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে বিদেশি পর্যটকরা উৎসবের সময় পার্ক স্ট্রিট এবং বো ব্যারাক পরিদর্শন করতে পারেন। এই উদ্দেশ্যে বিশেষ দোতলা বাস এবং জলযানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের পৌঁছে দেবে।
এছাড়াও, ১৯ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত কলকাতার অ্যালেন পার্কে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন করবে খ্রিস্টান সম্প্রদায়। ২৪ এবং ২৫ ডিসেম্বর অ্যালেন পার্ক বন্ধ থাকবে, কারণ এই দিনগুলোতে বড়দিনের প্রকৃত ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো অনুষ্ঠিত হবে। ২৬ ডিসেম্বর কলকাতা পুলিশ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে, এবং ২৭ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন পরিচালিত হবে রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি ও পর্যটন দপ্তর দ্বারা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই উৎসবকে এক বিশেষ সাফল্য বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি আরও বলেন, “বড়দিন উদযাপন করা আমাদের একটি ঐতিহ্য এবং আমরা চাই এই আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক।” রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগের মাধ্যমে কলকাতা শহরের সাংস্কৃতিক জীবন আরও সমৃদ্ধ হবে এবং শহরটি তার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি বড় অংশ হয়ে উঠবে।
এবারের বড়দিন উৎসব হবে এক নতুন উচ্চতায়, যেখানে সঙ্গীত, নাচ, উৎসবের আনন্দ, এবং সংস্কৃতি একত্রিত হবে। কলকাতাবাসী এবং পর্যটকদের জন্য এটি এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে চলেছে, যা তারা দীর্ঘদিন মনে রাখবেন।