রবিবার সকাল থেকেই ফের চাঞ্চল্য ছড়াল নবান্ন অভিযান ঘিরে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নির্যাতিতার মা, যিনি অভিযানে অংশ নিতে গিয়ে আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ, বর্তমানে ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে রবিবার সকালে প্রকাশিত মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়েছে— রোগীর শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল, সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার স্বাভাবিক রয়েছে, এবং তাঁকে নিউরো টিম পর্যবেক্ষণ করছে। চিকিৎসকদের মতে, প্রাথমিক পর্যায়ে গুরুতর কোনও জটিলতা না থাকলেও মাথায় আঘাতের কারণে তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
এই ঘটনার সূত্রপাত শনিবার, নবান্ন অভিযানে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আন্দোলনকারীরা এদিন নবান্ন অভিমুখে মিছিল নিয়ে এগোতে থাকেন। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন আরজি করের নির্যাতিতার মা-বাবা। অভিযোগ, পথে পুলিশি বাধা, ধস্তাধস্তি এবং বিশৃঙ্খলার মধ্যে গুরুতর আঘাত পান নির্যাতিতার মা। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ধস্তাধস্তির সময় তিনি মাটিতে পড়ে যান, মাথায় চোট পান এবং কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ সময় তাঁর স্বামী, অর্থাৎ নির্যাতিতার বাবাকেও হেনস্থার শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ।
ঘটনার পর দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে রাতে ভর্তি রাখা হয় এবং রবিবার সকালে তাঁর অবস্থার আপডেট জানাতে মেডিক্যাল বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রোগীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে আপাতত উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। তবুও, মাথার আঘাত এবং মানসিক চাপে তাঁর উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, এই ঘটনার রাজনৈতিক তাৎপর্যও প্রবল। নবান্ন অভিযান ঘিরে শনিবার থেকেই উত্তেজনা চরমে ওঠে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর এসেছে। বহু জায়গায় লাঠিচার্জ, জলকামান ব্যবহার, এবং ব্যাপক ধস্তাধস্তির ছবি ধরা পড়েছে সংবাদমাধ্যমে। এর মধ্যে নির্যাতিতার মা-বাবার উপর হামলার অভিযোগ নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
রবিবার সকালে কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “নির্যাতিতার মা কীভাবে আহত হলেন, সেই বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ এলেও তদন্ত হবে, অভিযোগ না এলেও পুলিশ নিজ উদ্যোগে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।” তাঁর দাবি, পুলিশের উদ্দেশ্য সত্য উদ্ঘাটন করা এবং যাতে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করা।
এই বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, পুলিশ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে, যার ফলে বহু মানুষ আহত হয়েছেন, এমনকি নির্যাতিতার মতো সংবেদনশীল ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির পরিবারও রেহাই পাননি। অন্যদিকে, রাজ্যের শাসক শিবিরের বক্তব্য, আন্দোলনকারীদের অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা তৈরি করেছেন, যার ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
নবান্ন অভিযানে আহত নির্যাতিতার মা এখন সাধারণ মানুষের কাছে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। সামাজিক মাধ্যমে তাঁর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। বহু মানুষ সহানুভূতি ও সমর্থনের বার্তা পাঠাচ্ছেন। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই ঘটনায় শুধু রাজনৈতিক আন্দোলনের দমন নয়, বরং ন্যায়বিচারের দাবিকে দমন করার এক ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত তৈরি হল।
যাই হোক, আপাতত সবার নজর হাসপাতালের পরবর্তী মেডিক্যাল বুলেটিনের দিকে। চিকিৎসকদের মতে, পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে পুলিশি তদন্তে কী উঠে আসে, তা নিয়েও উৎসুক সকলে। তবে এই ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে— নবান্ন অভিযানের উত্তাপ এখনও থামেনি, বরং নতুন বিতর্কে তা আরও তীব্র হচ্ছে।