বাংলাকে শিক্ষা খাতে অর্থ না দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করল কেন্দ্র

গত কয়েক বছর ধরেই কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের টানাপোড়েন বারবার উঠে এসেছে সংবাদ শিরোনামে। বিশেষত উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের…

বাংলাকে শিক্ষা খাতে অর্থ না দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করল কেন্দ্র

গত কয়েক বছর ধরেই কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের টানাপোড়েন বারবার উঠে এসেছে সংবাদ শিরোনামে। বিশেষত উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, জল জীবন মিশন—এইসব কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির অর্থ বন্টন নিয়েই মূলত বিতর্কের সূত্রপাত। রাজ্যের দাবি, কেন্দ্র রাজনীতির স্বার্থে বাংলাকে বঞ্চিত করছে। এবার সেই অভিযোগ কার্যত মেনে নিল কেন্দ্রীয় সরকারই।

সর্বশিক্ষা মিশনে অর্থ আটকে রাখার অভিযোগ

   

সর্বশিক্ষা মিশন, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রকল্প, তার আওতায় রাজ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক নিয়োগ, পড়ুয়াদের জন্য পাঠ্যসামগ্রী ও মিড-ডে মিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ অর্থ দীর্ঘদিন ধরেই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ছিল রাজ্যের। রাজ্য সরকার একাধিকবার কেন্দ্রকে চিঠি লিখেও কোনো প্রতিক্রিয়া পায়নি। তবে সম্প্রতি সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, ‘প্রয়োজনীয় নিরীক্ষা ও যাচাই না হওয়ায়’ কিছু রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া টাকা আপাতত দেওয়া হচ্ছে না।

এই বক্তব্যকেই কার্যত বঞ্চনার স্বীকৃতি হিসেবে দেখছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলার প্রাপ্য আটকে রাখা হচ্ছে। এইভাবে রাজ্যের কোটি কোটি মানুষকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এবার কেন্দ্র নিজেই তা স্বীকার করে নিল।”

১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনাতেও বন্ধ অনুদান

১০০ দিনের কাজ বা ‘মনরেগা’ প্রকল্পে বাংলার প্রাপ্য প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা এখনও মেলেনি বলে অভিযোগ রাজ্যের। একই অবস্থা আবাস যোজনার ক্ষেত্রেও। রাজ্যের দাবি, প্রায় ৩২ লক্ষ গৃহহীনের জন্য গৃহ নির্মাণের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, “রাজ্যের পক্ষ থেকে উপযুক্ত তথ্য, প্রকল্পের অগ্রগতি সংক্রান্ত নথি এবং ভেরিফিকেশন রিপোর্ট দেওয়া হয়নি।”

তবে রাজ্য সরকারের দাবি, সমস্ত প্রক্রিয়া মেনে তথ্য পাঠানো হয়েছে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার এই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানিয়েছেন। এমনকি জাতীয় স্তরের প্রশাসনিক মঞ্চেও রাজ্যের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।

Advertisements

জল জীবন মিশনেও অনুদান স্থগিত

জল জীবন মিশন প্রকল্পের অধীনে প্রত্যন্ত গ্রামে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও রাজ্য সরকার অভিযোগ করছে, সেই অনুদানও দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে একাধিক জেলার প্রকল্প থমকে গিয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া সত্ত্বেও অর্থ ছাড় হচ্ছে না।

রাজনীতি না করে উন্নয়নে গুরুত্ব দিন: বার্তা রাজ্যের

এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার এবং শাসক দল স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—উন্নয়নকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি করা উচিত নয়। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা, পরিকাঠামো, পানীয় জল ব্যবস্থা, গৃহ নির্মাণ—সবই সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাজনীতি থাকুক তার জায়গায়, কিন্তু মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কেন্দ্র ও রাজ্য একসঙ্গে কাজ করুক—এটাই এখন বাংলার প্রত্যাশা।

তৃণমূলের অভিযোগ ও কেন্দ্রের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে ফাঁস পড়ে আছে সাধারণ মানুষ। বকেয়া টাকা না ছাড়লে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বাংলার শিক্ষার্থী, কৃষিশ্রমিক, গৃহহীন এবং গ্রামের মানুষজন। এখন দেখার, রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ে আদৌ কি কেন্দ্র এই অনুদান দ্রুত মঞ্জুর করে, নাকি রাজনৈতিক সংঘাতেই চলবে আর এক দফা প্রশাসনিক যুদ্ধ।