শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে কেন্দ্র-রাজ্যে খেলা প্রকাশ্যে

শিয়ালদহের ইএসআই হাসপাতালে শুক্রবার ভোরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড (Sealdah ESI Hospital Fire) কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে দায় অস্বীকারের ছবি প্রকাশ্যে। ভোর সাড়ে চারটের…

Moloy Ghatak

শিয়ালদহের ইএসআই হাসপাতালে শুক্রবার ভোরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড (Sealdah ESI Hospital Fire) কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে দায় অস্বীকারের ছবি প্রকাশ্যে। ভোর সাড়ে চারটের দিকে হাসপাতালের মেল সার্জিক্যাল ডিপার্টমেন্টে আগুন লাগার পর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত অপারেশন থিয়েটার ও পোস্ট অপারেটিভ ডিপার্টমেন্ট কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

এই ঘটনার পর হাসপাতালের সুপার ডক্টর অদিতি দাস জানিয়েছেন, “ফায়ার এক্সটিগুইশার থাকলেও, অগ্নি নির্বাপনের মূল ভিত্তি ফায়ার স্প্রিংকলার সিস্টেম সম্পূর্ণরূপে কাজ করছে না।” এ কারণে দমকলের দশটি ইঞ্জিনকে মাঠে নামাতে হয়েছে অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য।

   

রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক ঘটনাস্থলে এসে উত্তম বর্ধন নামের ৫৭ বছর বয়সী এক ক্যান্সার পেশেন্টের মৃত্যুর ঘটনায় মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “এটা ফোর্থ স্টেজ ক্যান্সার, একজন রোগীর মৃত্যু হওয়ার জন্য আগুন বা ধোঁয়াকে দায়ী করা উচিত নয়।”

মলয় ঘটক আরও বলেন, “এক সময় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে হাসপাতালগুলোর দেখাশোনা করত। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে চলে গেছে।” তিনি অভিযোগ করেন, “অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সংস্থার। দেড় বছর আগে যে কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল, তা আজও হয়নি।”

তিনি পরিদর্শনের পর আবারও রাজ্য সরকারের দায় অস্বীকার করেন। “এই পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব নেই,” বলেন তিনি। মলয় বাবু ইএসআইসির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তড়িঘড়ি মিটিং ডেকেছেন।

ঘটনাস্থলে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন তৎপরতা বাড়িয়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তারা প্রশ্ন তুলেছেন হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। অনেকেই বলছেন, “এমন দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?”

রাজনৈতিক মহলে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুরক্ষিত না থাকলে রোগীদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে।

এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক টানাপড়েনের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার অভিযোগ উঠছে। রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশে উত্তেজনা বাড়ছে।

এখন দেখার বিষয়, এই ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং ভবিষ্যতে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিভাবে উন্নত করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ঘটনাটি কতটা গুরুত্ব পাবে, সেটাও সময়ই বলবে।

বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে, যাতে অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ জানা যায় এবং ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়। স্থানীয় জনগণ এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন এবং নিরাপত্তার প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালের এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে রাজনৈতিক চাপের সৃষ্টি করেছে, যা রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। স্থানীয় নেতারা এবং জনগণ একযোগে দাবি করছেন, হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দ্রুত উন্নত করতে হবে।

আসলে, এই ঘটনার ফলে রাজ্য সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। জনগণের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন প্রশাসন। তবে, এই কঠিন পরিস্থিতিতে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে যে দায় ঠেলাঠেলির ট্রাডিশন দেখা যাচ্ছে, সেটি কি এবারও জারি থাকবে? সেটাই এখন দেখার বিষয়।