তিলোত্তমা ঘটনার তদন্তে নতুন মোড় এসেছে। সম্প্রতি সিবিআই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা এই মামলার প্রক্রিয়ায় গতি এনে দিতে পারে। সল্টলেকের আরজি কর হাসপাতালে ঘটনার দিন কর্তব্যরত ১১ জন পুলিশ কর্মীকে তলব করেছে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (CBI)। গতকাল ও আজ, অর্থাৎ সোম এবং মঙ্গলবার, এই পুলিশ কর্মীদের সিবিআই দফতরে ডাকা হয়েছে। সিবিআই-র কর্মকর্তারা এসব কর্মী থেকে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে চান, যাতে তদন্তের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায় এবং সঠিক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়।
সিবিআইয়ের একটি সূত্র জানায়, তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়েই যেসব পুলিশ কর্মী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, তাদের কাছ থেকে কিছু অত্যন্ত জরুরি তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন। তাঁদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হচ্ছে, ৯ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ঠিক কোথায় ছিলেন তারা, কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, কে কোথায় ছিলেন এবং কীভাবে তিলোত্তমা পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন। এই তদন্তের মাধ্যমে মামলার নতুন দিক স্পষ্ট হতে পারে বলে আশা করছেন সিবিআইয়ের কর্মকর্তারা।
তবে এই পদক্ষেপের পরও তিলোত্তমার পরিবার খুব একটা স্বস্তিতে নেই। তিলোত্তমার বাবা-মা সম্প্রতি দিল্লি গিয়ে সিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে সিবিআই ডিরেক্টরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের অভিযোগ ছিল, তদন্তের গতি খুব ধীর এবং সিবিআই কোনোভাবে তদন্তের স্ট্যাটাস তাদের জানাচ্ছে না। সিবিআই-র কাছে তাঁদের আক্ষেপ, মামলা সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রদান করা হয়নি, এবং তারা মনে করছেন যে তদন্তের ধীরগতির কারণে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
তিলোত্তমার বাবা দিল্লিতে সিবিআই ডিরেক্টরকে সরাসরি বলেছিলেন, “আমরা সিবিআই তদন্তে খুশি নই, সেটা বলার জন্যই এতদূর এসেছিলাম। ওনারা বললেন, আমরা তদন্ত করছি, ধৈর্য ধরুন। আরও কিছুদিন দেখি, তারপর দিল্লিতে বা অন্য কোথাও ধরনা করার কথা ভাবব। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।” তিলোত্তমার পরিবার এবং তাদের সমর্থকরা বিশ্বাস করেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে যদি সঠিক বিচারের ব্যবস্থা করা না হয়, তবে এটি অন্যদিকে সমাজের প্রতি ভুল বার্তা পাঠাতে পারে।
এদিকে, সঞ্জয় রাই নামক একজন অভিযুক্ত ইতিমধ্যেই এই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়ে গেছেন। তবে তিলোত্তমার পরিবার এবং সমাজের অনেকেই মনে করেন, শুধু একজনের শাস্তি দিয়ে এই ঘটনার পরিপূর্ণ বিচার সম্ভব নয়। পুলিশ প্রশাসন এবং সিবিআই যদি সঠিকভাবে তদন্তে মনোযোগ না দেন, তবে অনেক অপরাধী হয়তো পার পেয়ে যাবে, যা সমাজে আরো বড় সমস্যা সৃষ্টি করবে।
এখনো পর্যন্ত এই মামলায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। তিলোত্তমার পরিবার বিচার চাইছেন, তবে তদন্তের প্রক্রিয়া কেমন চলবে, সেটা কেবল সময়ই বলতে পারবে। সিবিআই ও পুলিশের কাছ থেকে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করা প্রয়োজন, যা এই ঘটনার প্রকৃত রূপ তুলে ধরতে সহায়ক হবে।