গ্রামের মহিলাদের হাতে নিউ টাউনে কোটি টাকার ক্যান্টিন ব্যবসা

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের বাজিমাত (Canteen Business)। রান্নার কাজে পটু রাজারহাটের কিছু গৃহবধূ নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন। এইসব মহিলারা এখন শুধুমাত্র বাড়ির খাবারের স্বাদ নয়, শহরের বেশ…

Rural Women Run Multi-Crore Canteen Business in New Town

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের বাজিমাত (Canteen Business)। রান্নার কাজে পটু রাজারহাটের কিছু গৃহবধূ নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন। এইসব মহিলারা এখন শুধুমাত্র বাড়ির খাবারের স্বাদ নয়, শহরের বেশ কিছু অফিসের কর্মীদের পেটও ভরাচ্ছেন। সস্তায় তৈরি পুষ্টিকর খাবার বর্তমানে নিউ টাউনে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকা ব্যবসা করে। 

শুরুর দিকে কয়েকজন গৃহবধূ মিলে রাজারহাট নিউ টাউনে একটি রেস্তরাঁ খুলেছিলেন, যার নাম ছিল ‘জাগরণী’। রেস্তরাঁটি ছিল সাশ্রয়ী, যেখানে ভাত, ডাল, মাছ, মাংস, চাউমিন, ফিশফ্রাই, চিলি চিকেন ইত্যাদি ছিল। ব্যবসা বাড়ানোর পর তারা আরও একটি রেস্তরাঁ খুলেছিলেন এনকেডিএ ভবনের ক্যান্টিনে, যার নাম ছিল ‘খাদ্য ছায়া’। তবে করোনা মহামারীর সময় তাদের রেস্তরাঁ দুটো বন্ধ হয়ে যায়। তবে রান্না বন্ধ হয়নি। কোয়ারান্টিন সেন্টারে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব ছিল তাদের উপর।

kolkata24x7-sports-News

   

এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। লকডাউনের পরেও তাদের কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছিল, আর এখন আবার নতুন উদ্যমে খোলা হয়েছে নতুন ক্যান্টিন। নিউ টাউনের এনকেডিএ বিল্ডিংয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে আরও একটি ক্যান্টিন খোলা হয়েছে। এখানে সস্তায় ফিশ থালি, চিকেন থালি, রুটি–সব্জি, টিফিন, চা, কফি, ওমলেট ইত্যাদি মিলছে। শহরের অন্যান্য পাইস হোটেলের তুলনায় এখানে খাবারের দাম কম, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং সুস্বাদুও রয়েছে। শুধু অফিসসের স্টাফরা নয়, পাশাপাশি কলেজের ছেলে মেয়েরাও এখানে খাবার খেতে আসে।

এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কিছু পরিশ্রমী গৃহবধূ, যারা শুধু রান্নার কাজেই নয়, বাজার করা, পরিবেশন করা, হিসাব রাখার কাজও নিজেরাই সামলান। রাজারহাট ব্লকের বিডিও গোলাম গওসল আজম বলছেন, ‘স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ওই ৩০ জন মহিলার জন্য আমরা গর্বিত। যে ভাবে তাঁরা ব্যবসা করছেন, তার কোনো তুলনা হয় না।’

২০১৭ সালে নিউ টাউন ইকোস্পেসের অ্যাকশন এরিয়া-২ তে আইটি হাবের কাছে একটি রেস্তরাঁ চালু করেছিল নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। সেখানে গৃহবধূদের একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী দায়িত্ব নেয় এবং তাদের রান্নার দক্ষতার কারণে দ্রুত ব্যবসা বাড়তে থাকে। পরে তারা দুটো ক্যান্টিন এবং একটি ক্যাফে চালিয়ে ৩০ হাজার টাকা প্রতিদিন বিক্রি করতে থাকে। এখন তাদের মাসিক ব্যবসার পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা।

এই সমস্ত গৃহবধূদের সফলতার কারণ হলো তাদের পরিশ্রম, সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার মনোভাব। প্রতিদিনের কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে তাদের অভ্যস্ততা ছিল রান্না এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, যা তাঁদের ব্যবসায়িক সাফল্যের অন্যতম কারণ। এক্ষেত্রে, তাঁদের ব্যবসার মডেল অন্যদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

এনকেডিএর এক পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘ওরা প্রত্যেকেই খুব পরিশ্রমী। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন। আমি ওদের শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি।’ আজ, এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী শুধুমাত্র নিজেদের উন্নতির জন্য কাজ করছে না, তাদের ব্যবসা এখন এলাকার জন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।