কলকাতা: গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র চাকরি হারানো একাংশকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ভাতা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্কে জড়াল নবান্ন। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) এই বিষয়ে শুনানিতে কড়া ভাষায় প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। তিনি স্পষ্ট ভাষায় মন্তব্য করেন, “Pls don’t distribute the money”—অর্থাৎ, এই মুহূর্তে ভাতা বিতরণ বন্ধ রাখার নির্দেশই কার্যত দিয়ে দেন তিনি।
ভাতা বিতরণের বিজ্ঞপ্তি ঘিরে বিতর্ক
রাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, চাকরি হারানো কিছু কর্মীকে অন্তর্বর্তীকালীন সহায়তা হিসেবে মাসিক ২৫,০০০ টাকা ভাতা দেওয়া হবে। এই ঘোষণা অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের ভাতা ইতিমধ্যেই এক কিস্তিতে বিতরণ করা হয়েছে। আদালতে অ্যাডভোকেট জেনারেল (AG) কিশোর দত্ত জানান, আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে এবং আবেদনগুলি যাচাই করাও সময়সাপেক্ষ।
তবে বিচারপতি অমৃতা সিনহা এই যুক্তি মানতে নারাজ। তিনি স্পষ্ট ভাষায় প্রশ্ন করেন, “বিজ্ঞপ্তি মেনে ভাতা কি দিয়েছে রাজ্য?” তাঁর মতে, বিষয়টি এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন এবং কোনও স্থায়ী সিদ্ধান্ত হয়নি। সেক্ষেত্রে এমন ভাতা বিতরণ কতটা আইনসঙ্গত, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
প্রশ্নের মুখে রাজ্যের নীতিগত সিদ্ধান্ত
বিচারপতির মন্তব্য আরও কঠোর হয় যখন তিনি বলেন, “২৫০০০ টাকা দেবেন, তার বিনিময়ে প্রাপকরা কী দেবে রাজ্যকে? বাড়িতে বসে বসে তারা টাকা নেবে? আপনি কি যে কাউকে এই টাকা দিয়ে দেবেন?” এই প্রশ্নগুলি রাজ্য সরকারের আর্থিক নীতির স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেয়।
সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রিভিউ মামলা
রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত আদালতকে জানান, সুপ্রিম কোর্টে এই চাকরি বাতিল সংক্রান্ত রিভিউ মামলা বিচারাধীন। সেই কারণে চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত এই আর্থিক সাহায্য শুধুমাত্র মানবিক বিবেচনায় দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “জীবনযাপনের জন্যই এই সাহায্য। রায় না হওয়া পর্যন্ত কিছু লোককে সম্পূর্ণ বেকার রেখে দেওয়া উচিত নয়।”
বিচারপতির কঠোর মন্তব্য
তবে বিচারপতি বলেন, “এর মানে দাঁড়াচ্ছে, যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে এবং রাজ্যের কোষাগারে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা, তাঁরাই এখন সরকারি ভাতা পাচ্ছেন। তা হলে কি রাজ্যের কোষাগার থেকেই সবাই টাকা পাবে?”
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “পুজোর অনুদান বা অন্য আর্থিক সাহায্যের সঙ্গে কি এই ভাতা তুলনা করা চলে? সেগুলো ছিল নির্দিষ্ট সামাজিক বা সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে। কিন্তু এখানে চাকরি বাতিল হয়েছে, সেটা তো আর এক নয়।”
রাজ্যের যুক্তি ও আদালতের অবস্থান
এজি দত্ত বলেন, এই সিদ্ধান্ত কোনও স্থায়ী পদক্ষেপ নয় এবং ভাতা দেওয়ার আগে প্রতিটি আবেদন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি দুপুর ২টোর মধ্যে আদালতে বিস্তারিত বিবরণ পেশ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
তবে বিচারপতির অবস্থান স্পষ্ট: “এভাবে তাড়াহুড়ো করে ভাতা বিতরণ ঠিক নয়। আইনি ও নৈতিক দিক বিবেচনা না করে এ ধরনের পদক্ষেপ বিপজ্জনক।”
এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিকে নজর এখন রাজ্যবাসীর। আদালত আদৌ রাজ্যকে ভাতা বিতরণে স্থগিতাদেশ দেয় কিনা, তা-ই এখন দেখার। রাজ্য সরকারের মানবিক যুক্তি ও হাইকোর্টের আইনসঙ্গত অবস্থানের দ্বন্দ্বের এই লড়াই রাজ্যের প্রশাসনিক স্বচ্ছতার প্রশ্নে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে চলেছে।