কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজ্যের একাধিক আইন কলেজের অব্যবস্থাপনা এবং বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার নিয়ম লঙ্ঘনকে কেন্দ্র করে। সম্প্রতি হাইকোর্টে এক আবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, রাজ্যের বেশ কিছু আইন কলেজ, বিশেষ করে রবীন্দ্র শিক্ষা সম্মিলনী আইন কলেজ, বার কাউন্সিলের অনুমোদনের বৈধতা হারিয়েছে এবং তা নবীকরণ করেনি। এর ফলে ওই কলেজ থেকে পাস করা ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।
বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এই বিষয়ে বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার কাছে হলফনামা তলব করেছেন। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বার কাউন্সিলকে জানাতে হবে, রাজ্যের আইন কলেজগুলোর অনুমোদন সংক্রান্ত বর্তমান পরিস্থিতি এবং কেন নবীকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।
বিচারপতি বলেন, “বছরের পর বছর পরিদর্শন এবং পর্যবেক্ষণ ছাড়াই কীভাবে কলেজগুলি চলছে? আইন মেনে চলার জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলি দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারাই কেন আইনের লঙ্ঘন করছে?”
এই মামলার আবেদনকারী অর্ক বিশ্বাস ও তার কয়েকজন সহপাঠী অভিযোগ করেন, রবীন্দ্র শিক্ষা সম্মিলনী আইন কলেজের বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার রেজিস্ট্রেশনের বৈধতার মেয়াদ বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর ফলে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাচ্ছেন না এবং তাদের ভবিষ্যৎ এক অন্ধকার অধ্যায়ের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
আবেদনকারীদের বক্তব্য, “আমরা যথাযথ নিয়ম মেনেই কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম এবং পড়াশোনা করেছি। কিন্তু কলেজের প্রশাসনিক অব্যবস্থার কারণে আমাদের কেরিয়ার আজ বিপন্ন। কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির দায়ভার আমাদের উপর কেন চাপবে?”
হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, রাজ্যের আইন কলেজগুলোর পরিকাঠামো ও কার্যক্রম কী অবস্থায় রয়েছে এবং সেগুলি বার কাউন্সিলের নিয়ম অনুযায়ী চলছে কিনা। বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বলেন, “আইন কলেজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে এত বছর নিয়মবহির্ভূতভাবে পরিচালিত হতে পারে? এর জন্য দায়ী কারা এবং কেন তারা এখনও পর্যন্ত শাস্তি পায়নি, তা হলফনামার মাধ্যমে জানাতে হবে।”
হাইকোর্ট আরও জানতে চেয়েছে, বার কাউন্সিল কেন এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কলেজগুলোর পরিকাঠামো এবং শিক্ষার মান যাচাইয়ের দায়িত্ব যাদের, তারাই যদি গাফিলতি করে, তাহলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা এর থেকে মুক্তি পাবেন কীভাবে?
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের একাধিক আইন কলেজের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। রেজিস্ট্রেশন নবীকরণের অভাবে কলেজের পাস করা ছাত্রছাত্রীরা আইনজীবী হিসেবে নাম নথিভুক্ত করতে পারছেন না। অনেকেই এই অবস্থাকে “শিক্ষার নামে প্রতারণা” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্যে বার কাউন্সিলকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে হলফনামা জমা দিতে হবে। আইন কলেজগুলির এহেন অব্যবস্থাপনা শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, গোটা শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আস্থা নষ্ট করছে। হাইকোর্টের এই পদক্ষেপ আইন কলেজগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, বার কাউন্সিল এবং সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করে এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেয়।