কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) গত শুক্রবার নিয়েছে বড় সিদ্ধান্ত। হাইকোর্ট বলেছে নিউ টাউনের এলিটা গার্ডেন ভিস্তা আবাসন প্রকল্পের একটি ২৬ তলা টাওয়ার ভেঙে ফেলতে হবে। এই টাওয়ারে রয়েছে ২৩৩টি ফ্ল্যাট, ২৬৯টি গাড়ি পার্কিং স্থান এবং একটি বাণিজ্যিক প্লাজা। ২০২০ সাল থেকে এই টাওয়ারে বসবাসকারী পরিবারগুলিকে এক মাসের মধ্যে এলাকা খালি করতে বলা হয়েছে।
এই রায় শুধুমাত্র একটি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ নয়, বরং কলকাতার রিয়েল এস্টেট খাতে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই রায়ে জড়িত প্রোমোটার এবং নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ)-র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং ফৌজদারি আইনের অধীনে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার পটভূমি হল এলিটা গার্ডেন ভিস্তা প্রকল্প, যা ২০০৭ সালে কেপেল ম্যাগাস প্রাইভেট লিমিটেড দ্বারা শুরু হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পে ১৫টি ২৩ তলা টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল, যেখানে ১,২৭৮টি ফ্ল্যাট এবং ১,৬৮৮টি গাড়ি পার্কিং স্থান ছিল। প্রতিটি ফ্ল্যাট মালিকের জমি ও সাধারণ এলাকার অংশ ছিল ০.১ শতাংশ। ২০১৪ সালে, এই প্রকল্পের অধিকার সুশীল মোহতার নেতৃত্বে এলিটা গার্ডেন ভিস্তা প্রাইভেট লিমিটেডের কাছে হস্তান্তরিত হয়।
২০১৫ সালে, নতুন প্রোমোটার বিদ্যমান ফ্ল্যাট মালিকদের সম্মতি ছাড়াই এনকেডিএ থেকে একটি সংশোধিত পরিকল্পনার অনুমোদন নিয়ে একটি অতিরিক্ত ২৬ তলা টাওয়ার এবং একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু করে। এই নির্মাণের ফলে মূল ফ্ল্যাট মালিকদের জমির অংশ ০.০৮ শতাংশে নেমে আসে এবং উন্মুক্ত স্থান ও পথ ৬০০ বর্গমিটার কমে যায়।
২০১৭ সালে মূল ফ্ল্যাট মালিকরা এই সংশোধিত পরিকল্পনার কথা জানতে পারেন এবং ২০১৮ সালে এনকেডিএ-র কাছে এই নির্মাণ বন্ধের জন্য আবেদন করেন। তবে, কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন।
বিচারপতি রাজশেখর মান্থা এবং অজয় কুমার গুপ্তার ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার শুনানি করে এবং রায়ে বলেন, “বিদ্যমান ফ্ল্যাট মালিকদের সম্মতি ছাড়া অতিরিক্ত নির্মাণ করা হলে ভেঙে ফেলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।”
আদালত আরও জানায়, এই নির্মাণ এনকেডিএ আইনের ৮১ ধারার অধীনে প্রতারণামূলক এবং অবৈধ। ফ্ল্যাট মালিকদের জমির অধিকার এবং আলো-বাতাসের প্রবেশে বাধা সৃষ্টির কারণে এই নির্মাণ ধরে রাখা যায় না।
আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, এলিটা গার্ডেন ভিস্তা প্রাইভেট লিমিটেডকে দুই মাসের মধ্যে এই টাওয়ার ভেঙে ফেলতে হবে এবং ১৬তম টাওয়ারের ফ্ল্যাট ক্রেতাদের ৭ শতাংশ সুদসহ তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। এছাড়া, এনকেডিএ-র সেই কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যারা এই সংশোধিত পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করেছিলেন। এই রায় কলকাতার রিয়েল এস্টেট খাতে একটি নজির স্থাপন করেছে, কারণ এটি প্রোমোটারদের দায়বদ্ধতা এবং ফ্ল্যাট মালিকদের অধিকারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।
এই ঘটনা ২০২০ সাল থেকে বসবাসকারী পরিবারগুলির জন্য একটি বড় ধাক্কা। তাদের এক মাসের মধ্যে ফ্ল্যাট খালি করতে হবে, যা তাদের জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “আমরা সৎভাবে ফ্ল্যাট কিনেছিলাম, কিন্তু এখন আমাদের সবকিছু হারাতে হচ্ছে।”
এই রায় রিয়েল এস্টেট সংস্থাগুলির উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ঘটনা ভবিষ্যতে ক্রেতাদের আরও সতর্ক করবে এবং প্রোমোটারদের আইনি প্রক্রিয়া মেনে চলতে বাধ্য করবে।
বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টর শক্তি হবে ভারত, ঘোষণা মোদীর
এই রায় কলকাতার রিয়েল এস্টেট বাজারে একটি সতর্কবার্তা। এটি প্রমাণ করে যে, আইনের উপরে কেউ নয় এবং ফ্ল্যাট মালিকদের অধিকার সুরক্ষিত করতে আদালত কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। এই ঘটনার পরবর্তী পদক্ষেপ এবং এর রাজনৈতিক-সামাজিক প্রভাব নিয়ে সবার নজর রয়েছে।