কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta High court) দুই বিচারপতির ভিন্ন মতের কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)-সহ ন’জনের জামিন মামলা। বুধবার, বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে জামিনের ক্ষেত্রে দুই বিচারপতির নির্দেশ একেবারেই আলাদা ছিল। এক বিচারপতি সকলকে জামিন মঞ্জুর করলেও, অন্য বিচারপতির নির্দেশে পাঁচজনের জামিন আটকে রাখা হয়েছে। ফলে, জামিন মামলা এখন কলকাতা হাই কোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে পাঠানো হচ্ছে।
সবচেয়ে সস্তায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মেলে কলকাতায়
এই ঘটনা রাজ্য তথা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো শীর্ষ নেতা এবং অন্যান্য অভিযুক্তদের জামিনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দুর্গাপুজোর আগেই এই মামলার শুনানি শেষ হয়ে গিয়েছিল, তবে রায়দান স্থগিত ছিল। মঙ্গলবার দুপুর ১টা নাগাদ আদালত সেই মামলার রায় ঘোষণা করেন, এবং দুই বিচারপতির ভিন্ন মতের কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
রাজ্য সরকারের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অন্যান্য আসামিদের জামিন মামলার বিষয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দুটি ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জামিন মঞ্জুর করার পক্ষে রায় দেন। তাঁর মতে, জামিনের শর্তাবলি যথাযথ পূরণ করলে সকল আসামিকে জামিন দেওয়া উচিত। তিনি মনে করেন যে, জামিন প্রক্রিয়া আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং তদন্তের জন্য আসামিদের আটক রাখা উচিত নয়, যদি না তা তদন্তে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
বিদায় সময়ের অপেক্ষা, বাইডেন-ট্রুডোকে ছাড়াই G20 ফটোসেশনে মাতলেন রাষ্ট্রনেতারা
অপরদিকে, বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায় মনে করেন যে, কিছু আসামির জামিন প্রাথমিকভাবে মঞ্জুর না করা উচিত। তিনি পাঁচজনের জামিন আটকে রাখার পক্ষে রায় দেন, কারণ তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এবং তাদের জামিন মঞ্জুর হলে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, যে এই মামলা এতটা উচ্চমাত্রায় রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব ফেলতে পারে, তাই সাবধানতার সঙ্গে এগোনো প্রয়োজন।
এছাড়া, বিচারপতি রায় বলেন, জামিন দেয়ার আগে আসামিদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং তদন্তের অগ্রগতির বিষয়টি আরও ভালোভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। জামিনের ক্ষেত্রে বিচারকরা সবসময়ই তদন্তে কোনো ধরনের বাধা আসতে পারে, এমন বিষয়টি মাথায় রাখেন।
এই দুই বিচারপতির ভিন্ন মতের কারণে জামিন মামলা এখন কলকাতা হাই কোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে পাঠানো হচ্ছে। সূত্র অনুযায়ী, তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতিরা জামিনের বিষয়ে আরও বিশদভাবে পর্যালোচনা করবেন এবং যদি প্রয়োজন হয়, তবে নতুন করে শুনানি শুরু হতে পারে। আদালত এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যাতে আসামিদের জামিনের বিষয়টি নিখুঁতভাবে মূল্যায়ন করা যায় এবং কোনো ধরনের আইনি সমস্যা না হয়।
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে, যা রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত। গত কয়েক মাসে এই মামলায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং সাক্ষ্য জমা পড়েছে, তবে তদন্ত এখনও চলমান।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অন্যান্য আসামির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, ও দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার তদন্তের কাজ যখনই ত্বরান্বিত হচ্ছে, তখন এই জামিন প্রশ্নটি আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মামলার রায় শুধুমাত্র পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত বিষয়ই নয়, এটি রাজ্য সরকারের ভবিষ্যত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
বিচারপতির ভিন্ন মতের কারণে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী দলগুলি যথাক্রমে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন মঞ্জুরের পক্ষে কথা বললেও, বিরোধী দলগুলি জামিন আটকে রাখার পক্ষে। বিরোধী দলগুলির মতে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তাই জামিন মঞ্জুর করা হলে তা আইনের প্রতি মানুষের আস্থা কমাতে পারে।
দূষণে দুর্বিসহ দিল্লি, ৫০ শতাংশ সরকারি কর্মচারিকে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের নির্দেশ আপ প্রশাসনের
এই মামলার আরও একটি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় হল, এই জামিন মামলার রায় দেশের অন্যান্য মামলার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে আদালতের ভূমিকা কী হবে, সে বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হতে পারে।
কলকাতা হাই কোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের রায়, আসামিদের জামিনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। এই মামলার রায় আগামী দিনগুলিতে আরও অনেক আইনি প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে, এবং দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর নতুন আলো ফেলবে।