রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে ফাঁসি চেয়ে হাইকোর্টে একটি আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। শিয়ালদহ জেলা দায়রা আদালতের ফাস্ট জাজ অনির্বাণ দাসের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এই আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু হাইকোর্টে রাজ্যের মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষভাবে, রাজ্য কীভাবে এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, সেই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক।
নিম্ন আদালতের রায়ে সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে রাজ্য সরকার এই রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। গত মঙ্গলবার মালদহে এক সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন এবং সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টও বুধবার রাজ্যের মামলা গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে, তবে মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিনের শুনানিতে বিচারপতি দেবাংশু বসাক রাজ্যের যুক্তি শুনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলেন। তিনি প্রথমে জানতে চান, রাজ্য সরকার কি এই মামলার বিষয়ে সঞ্জয় রায়ের পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেছে? এর পাশাপাশি, তিনি এই মামলার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ এই মামলার তদন্ত আগে রাজ্য পুলিশের হাতে ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে সিবিআইয়ের হাতে তদন্ত ভার দেওয়া হয়। সিবিআইও এই বিষয়ে একই যুক্তি তুলে ধরেছে।
বিচারপতি দেবাংশু বসাক আরও বলেন, “যদি আসামী মুক্তিপ্রাপ্ত হন, তবে আদালতে সেই রায় চ্যালেঞ্জ করার অধিকার থাকে। কিন্তু যখন নিম্ন আদালত সাজা ঘোষণা করে, তখন আইনের ব্যাখ্যা একটি সীমাবদ্ধতা নিয়ে আসে।” এই প্রসঙ্গে তিনি সলমন খানের ‘হিট অ্যান্ড রান’ কেসের উদাহরণ তুলে ধরেন। সেই মামলায় সলমন খানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং তাকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পরে উচ্চ আদালত সলমনের পক্ষে রায় দেয়।
এছাড়া, বিচারপতি সঞ্জয় রায়ের মামলার সার্টিফায়েড কপি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। সার্টিফায়েড কপি হল আদালতের রায়ের অফিসিয়াল কপি, যা পরবর্তীতে মামলা চ্যালেঞ্জ করতে হলে আদালতে জমা দিতে হয়। কিন্তু এখানেও একটি সমস্যা রয়েছে, কারণ নিম্ন আদালত রাজ্যকে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, যে কেউ এই মামলার সঙ্গে যুক্ত নয়, তাদেরকে সার্টিফায়েড কপি দেওয়া হবে না।
বিচারপতি স্পষ্ট করে বলেন, “যদি এই মামলাটি গ্রহণযোগ্য হয়, তবে তিনি নিম্ন আদালতকে সার্টিফায়েড কপি দিতে নির্দেশ দেবেন।” তবে এখনও পর্যন্ত হাইকোর্ট কোনও চূড়ান্ত নির্দেশ দেয়নি। আগামী সোমবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে এবং সেই দিনই রাজ্যকে প্রমাণ করতে হবে, যে তাদের আবেদনটি গ্রহণযোগ্য এবং এটি শুধুমাত্র একটি চমক নয়।
রাজ্যের আবেদন ও হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ নিয়ে এখন নজর রয়েছে সকলের। বিচারপতি দেবাংশু বসাকের মন্তব্য থেকে পরিষ্কার, রাজ্যকে যথেষ্ট যুক্তি দিতে হবে, যাতে মামলাটি গ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। সঞ্জয় রায়ের মামলার পরবর্তী শুনানি সবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে, যেখানে রাজ্য সরকারের আদালতে তার অবস্থান আরও পরিষ্কার করবে।