মমতা-সরকারের পুজোর অনুদানে ‘বড়সড়’ বাধা আদালতের

কলকাতা হাই কোর্টে (High Court) পুজোর অনুদান নিয়ে চলা মামলায় বুধবার এল বড় নির্দেশ। আদালত জানিয়ে দিল, সব ক্লাব বা পুজো কমিটি আর সরকারি অনুদান…

rg-kar-case-takes-new-turn-hearing-likely-to-move-to-justice-basaks-bench-in-calcutta-high-court

কলকাতা হাই কোর্টে (High Court) পুজোর অনুদান নিয়ে চলা মামলায় বুধবার এল বড় নির্দেশ। আদালত জানিয়ে দিল, সব ক্লাব বা পুজো কমিটি আর সরকারি অনুদান পাবে না। কেবলমাত্র সেই সমস্ত ক্লাবই এবার অনুদানের টাকা হাতে পাবে, যারা গত বছর পুজো শেষ হওয়ার পর আদালত (High Court) নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অনুদান খরচের পূর্ণাঙ্গ হিসাব জমা দিয়েছিল। বিচারপতি সুজয় পাল ও স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেয়।

রাজ্যে দুর্গাপুজো ঘিরে কয়েক বছর ধরেই অনুদান বিতরণকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সরকারি কোষাগার থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা ক্লাবগুলিকে দেওয়া হলেও, সেই টাকার প্রকৃত ব্যবহার কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এমনকি বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, এই অনুদান আসলে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার হাতিয়ার। সেই প্রেক্ষিতেই এবার আদালতের হস্তক্ষেপকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

   

আদালত(High Court) এ দিন স্পষ্ট জানিয়েছে, গত বছরের অনুদান যেসব ক্লাব নিয়েছিল এবং পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার খরচের খতিয়ান জমা দিয়েছিল, কেবলমাত্র তারাই এই বছরের অনুদান পাবে। যেসব ক্লাব সেই নিয়ম মানেনি, তারা আর কোনো অনুদান পাওয়ার যোগ্য থাকবে না। শুধু তাই নয়, আদালত এ বছর আরও কড়া শর্ত জুড়ে দিয়েছে। নির্দেশ অনুযায়ী, এ বছর যে ক্লাবগুলো অনুদান পাবে, তাদের অবশ্যই অনুদানের টাকা খরচের পূর্ণাঙ্গ হিসাব এক মাসের মধ্যে জমা দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে গেলে তারা ভবিষ্যতে অনুদানের টাকা পাওয়ার অধিকার হারাবে।

ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়কে অনেকেই পুজোর অনুদান বণ্টনে স্বচ্ছতা আনার দিকেই বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন। আদালতের(High Court) মতে, সরকারি টাকা ব্যবহার হচ্ছে মানুষের করের অর্থ থেকে, তাই তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এই কঠোরতা প্রয়োজন। আদালত আরও জানিয়েছে, পুজোর অনুদান কোনওভাবেই রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ার হতে পারে না।

এই রায়ের ফলে রাজ্যের হাজার হাজার পুজো কমিটির মধ্যে অনেকেই অনুদান থেকে বঞ্চিত হতে চলেছে। বিশেষত যেসব ক্লাব এতদিন নিয়ম না মেনেও টাকা পেয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এবার বড় ধাক্কা লাগতে চলেছে। অন্যদিকে, যারা নিয়ম মেনে খরচের হিসাব জমা দিয়েছিল, তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে।

Advertisements

রাজনৈতিক মহলেও এই রায় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিরোধীরা বলছে, আদালতের নির্দেশ প্রমাণ করছে এতদিন অনুদান বণ্টনে যথেষ্ট অব্যবস্থা ছিল। শাসক দলের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, সরকার সব সময়ই স্বচ্ছতার পক্ষে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী যে নিয়ম তৈরি হবে, তাও সরকার মেনে চলবে।

রাজ্যের সাধারণ মানুষও এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন। অনেকের মতে, সরকারি টাকা খরচ হচ্ছে মানে তা জনগণের টাকাই। তাই প্রতিটি পয়সার খরচের হিসাব দেওয়া উচিত। দুর্গাপুজো বাংলার আবেগ হলেও, তার নামে অপচয় বা অস্বচ্ছ ব্যবহারকে কোনওভাবেই সমর্থন করা যায় না।

সব মিলিয়ে, কলকাতা হাই কোর্টের (High Court) এই রায় ভবিষ্যতে দুর্গাপুজোর অনুদান বিতরণের ক্ষেত্রে একটি নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করল। এবার থেকে শুধু উৎসবের আবেগ নয়, বরং স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার উপরও সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে। আদালতের এই নির্দেশ কার্যকর হলে অনুদানের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে এবং পুজোর উৎসবও হবে আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ।