কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে নির্দেশ দিয়েছে যে, সরকারি দলের বিধায়কদের নিরাপত্তারক্ষীরা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। এতদিন এই নিয়ম শুধুমাত্র বিরোধী দলের নেতাদের নিরাপত্তারক্ষীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু নতুন এই নির্দেশের ফলে সরকারি দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়কদের নিরাপত্তারক্ষীরাও বিধানসভার গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতে পারবেন না।
এই রায় বিধানসভার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার নেতৃত্বাধীন একক বেঞ্চে শুক্রবার এই নির্দেশ জারি করা হয়।
এই মামলাটি দায়ের করেছিলেন বিরোধী দল বিজেপি’র একজন নেতা, যিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, সরকারি দলের বিধায়কদের নিরাপত্তারক্ষীদের বিধানসভায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, যা নিয়মের বিরুদ্ধে এবং বিরোধী দলের প্রতি বৈষম্যমূলক।
আবেদনকারীর দাবি ছিল, বিধানসভার নিরাপত্তা নীতি সকল বিধায়কের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়া উচিত। হাইকোর্ট এই যুক্তি গ্রহণ করে নির্দেশ দিয়েছে যে, কোনও বিধায়কের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী—সরকারি বা বিরোধী দল যাই হোক না কেন—বিধানসভার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবেন না।বিধানসভার নিরাপত্তার জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর তরফে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, “বিধানসভা একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, এবং এর নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্যের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর। ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের প্রবেশ বিধানসভার পরিবেশ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করতে পারে।” এই নির্দেশের ফলে বিধানসভার গেটে নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হবে, এবং তারা বিধায়কদের সঙ্গে শুধুমাত্র গেট পর্যন্ত যেতে পারবেন।
এই রায় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “আমরা হাইকোর্টের রায়কে সম্মান করি। তবে, এই নির্দেশের ফলে বিধায়কদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। আমরা চাই রাজ্য সরকার এই বিষয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিক।”
তিনি আরও বলেন, তৃণমূল বিধায়কদের নিরাপত্তার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এবং এই নির্দেশ তাদের কার্যক্রমে কোনও প্রভাব ফেলবে না।
অন্যদিকে, বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “বিধানসভার নিরাপত্তা নিয়ে কোনও বৈষম্য গ্রহণযোগ্য নয়। এতদিন বিরোধী দলের বিধায়কদের নিরাপত্তারক্ষীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু সরকারি দলের বিধায়কদের জন্য এই নিয়ম প্রযোজ্য ছিল না। হাইকোর্টের এই রায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে।”
তিনি আরও বলেন, এই নির্দেশ বিধানসভার গণতান্ত্রিক পরিবেশকে শক্তিশালী করবে।এই রায়ের প্রেক্ষাপটে বিধানসভার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিধানসভার মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে রাজ্যের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর থাকা উচিত।
তবে, কিছু বিধায়ক মনে করছেন, তাঁদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য এই নির্দেশ প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, যেসব বিধায়করা জেড-শ্রেণির নিরাপত্তা পান, তাঁদের জন্য এই নিয়ম কিছুটা অসুবিধাজনক হতে পারে।বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে বিধানসভার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্গঠন করা হবে।
তিনি বলেন, “বিধানসভার নিরাপত্তা আমাদের কাছে অগ্রাধিকার। আমরা নিশ্চিত করব যে, কোনও বিধায়কের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করা না হয়।” তিনি আরও জানান, নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য গেটের বাইরে বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।এই রায়ের পর বিধানসভায় নিরাপত্তা নিয়ে নতুন নিয়মাবলী প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
7000mAh ব্যাটারি ও 100W চার্জিং সহ আসছে iQOO 15, থাকছে চমকপ্রদ সব ফিচার
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্দেশ বিধানসভার গণতান্ত্রিক চরিত্রকে আরও স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করবে। তবে, সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে এই নিয়ে রাজনৈতিক তরজা অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী দিনে এই নির্দেশের বাস্তবায়ন কীভাবে হয়, তা নিয়ে সকলের নজর রয়েছে।