ঝুলে থাকা মামলায় শীর্ষে কলকাতা হাইকোর্ট, ধারে কাছে নেই অন্য আদালত

ভারতের বিচারব্যবস্থায় একটি গুরুতর চিন্তার বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা মামলার সমস্যা। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় বিচার তথ্য গ্রিড (এনজেডজি) থেকে প্রকাশিত…

bengal govt moves to high court on rg kar case

ভারতের বিচারব্যবস্থায় একটি গুরুতর চিন্তার বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা মামলার সমস্যা। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় বিচার তথ্য গ্রিড (এনজেডজি) থেকে প্রকাশিত হওয়া তথ্যে দেখা গেছে যে, ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা মামলার তালিকায় কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta HC) অত্যন্ত অগ্রসর রয়েছে। এই হাইকোর্টে ২,১৮৫টি মামলা ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে মীমাংসার অপেক্ষায় রয়েছে, যা অন্যান্য হাইকোর্টগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। মোট ৯টি হাইকোর্টের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মোট ২,৩২৯টি মামলা ৫০ বছর অতিক্রম করে ঝুলে আছে, এবং এর মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের অংশ নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড়।

এই তথ্য প্রকাশের পর থেকে বিচারব্যবস্থার দক্ষতা ও দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কলকাতা হাইকোর্ট, যা ১৮৬২ সালে ভারতের প্রথম হাইকোর্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার ঐতিহ্য ও গৌরবের পাশাপাশি এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মাদ্রাস হাইকোর্টে ৫৬টি, পাটনা হাইকোর্টে ৪৬টি, এবং আলাহাবাদ হাইকোর্টে ১৭টি মামলা ঝুলে থাকলেও, কলকাতার সংখ্যা এদের সমস্তকে ছাড়িয়ে গেছে। তেলেঙ্গানা হাইকোর্টে ৯টি, উড়িষ্যা হাইকোর্টে ৮টি, মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে ৪টি, বোম্বে হাইকোর্টে ২টি এবং পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে ২টি মামলা এই তালিকায় রয়েছে।

   

কারণ ও পটভূমি
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিশাল ব্যাকলগের পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমত, কলকাতা হাইকোর্টের ওপর পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বিস্তৃত আইনি দায়িত্ব রয়েছে, যা কেসলোডকে বাড়িয়ে তোলে। দ্বিতীয়ত, বিচারকদের সংখ্যার তুলনায় মামলার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেশি, যা দ্রুত বিচারে বাধা সৃষ্টি করছে। ভারতের প্রতি এক মিলিয়ন মানুষের জন্য বিচারকের অনুপাত ২১ জন মাত্র, যা বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় খুবই কম। বৈদ্যুতিন কেন্দ্র ফর লিগাল পলিসির ২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই অপর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং জটিল আইনি পদ্ধতি মিলে মামলা মীমাংসার সময় বাড়িয়ে দেয়।

এর সাথে সাথে, কলকাতা হাইকোর্টের পুরনো ভবন ও অবকাঠামোর অবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সামাজিক মাধ্যমে কিছু ব্যবহারকারী এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন যে, হাইকোর্টের ভবন ৫০০ বছরের মতো পুরানো বলে মনে হয়, যা প্রযুক্তির অভাব এবং দক্ষতাহীনতার প্রতীক হিসেবে দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কলকাতা হাইকোর্ট আধুনিকীকরণের জন্য প্রাপ্ত তহবিল থেকে বঞ্চিত রয়েছে, যা এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

জনগণের প্রতিক্রিয়া
সামাজিক মাধ্যমে এই তথ্য প্রকাশের পর বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি ভারতীয় বিচারব্যবস্থার জন্য লজ্জার বিষয়, যেখানে ৫০ বছর পর্যন্ত মামলা মীমাংসা হতে পারে না। একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “৫০ বছর ঝুলে থাকা মামলা মানে বিচার নয়, বিচারের ছুটি!” অন্যদিকে, কিছু ব্যক্তি মনে করছেন যে, এই বিলম্বের পেছনে সরকারি অবহেলা এবং দুর্নীতি রয়েছে। একটি জনপ্রিয় মেমে সার্কুলেট হচ্ছে, যেখানে লেখা রয়েছে “Everybody sab ke sab chor hai sale,” যা জনগণের হতাশা প্রকাশ করছে।

Advertisements

সমাধানের পথ
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, বিচারকদের সংখ্যা বাড়ানো, ডিজিটালীকরণ প্রক্রিয়াকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেওয়া এবং আইনি পদ্ধতি সরলীকরণের মাধ্যমে এই সমস্যা কিছুটা কমানো সম্ভব। সরকারের পক্ষ থেকে ২০০২ সালে নির্ধারিত লক্ষ্য ছিল প্রতি এক মিলিয়ন মানুষের জন্য ৫০ জন বিচারক নিযুক্ত করা, কিন্তু এখনও সে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। এছাড়া, কলকাতা হাইকোর্টের জন্য বিশেষ তহবিল বরাদ্দ এবং অবকাঠামোর উন্নতি একটি দ্রুত সমাধান হতে পারে।

কলকাতা হাইকোর্টের ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা ২,১৮৫টি মামলা ভারতীয় বিচারব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার, বিচারব্যবস্থা এবং সামাজিক সংগঠনদের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। নইলে, এই ঝুলন্ত মামলাগুলো জনগণের বিচারে বিশ্বাস আরও কমিয়ে দিতে পারে, যা একটি গভীর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলবে।

Calcutta HC leads with 2,185 cases pending over 50 years, 94% of India‘s total. Explore reasons for delays and solutions to tackle the judicial backlog crisis.