কলকাতা বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক সেকশনের ডিউটি-ফ্রি এলাকা, যা সাধারণত বিমান চলাচল কম হওয়ার কারণে একেবারে শীতল অবস্থায় থাকে, এখন এক নতুন রূপে উজ্জীবিত হয়েছে। সম্প্রতি সেখানে ফ্লোর প্ল্যান পরিবর্তন করা হয়েছে, যার ফলে এই অঞ্চলে অবস্থিত ব্যাবসায়িক দোকানগুলোকে একত্রিত করে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। এর ফলে যাত্রীরা এখন আরও সহজে এবং সুবিধাজনকভাবে শপিং করতে পারছেন।
নতুন পরিবর্তন ও সম্প্রসারণের কাজ
কলকাতা বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক সেকশনের সিকিউরিটি-হোল্ড এলাকা বর্তমানে ১০,৩২৪ বর্গ মিটার, যা সম্প্রসারণ করে ১০,৫৯৪ বর্গ মিটার করা হবে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয়েছিল গত নভেম্বরে, এবং এটি সম্পূর্ণ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে। এই সম্প্রসারণের মাধ্যমে অতিরিক্ত বাণিজ্যিক দোকান এবং যাত্রীদের জন্য আরও আসন ব্যবস্থা রাখা হবে।
বিমানবন্দর পরিচালক প্রবত রঞ্জন বেজুর মতে, “বর্তমানে সিকিউরিটি চেক-ইন কাউন্টারগুলো যেখানে ছিল, সেগুলো স্থানান্তরিত হবে এবং সেখানে আরও বাণিজ্যিক দোকান এবং খাবারের দোকান তৈরি করা হবে। এতে যাত্রীদের জন্য আরও সুবিধা হবে।”
তবে আন্তর্জাতিক সেকশনে নতুন বোর্ডিং গেটের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে না, বললেন এক বিমানবন্দর কর্মকর্তা।
শপিংয়ে নতুন মুখ
পূর্বে ডিউটি-ফ্রি দোকানগুলির অধিকাংশই বড় এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিল, এবং সে কারণে এসব দোকানগুলোতে যাত্রীদের উপস্থিতি খুবই কম ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ফ্লোর প্ল্যান পরিবর্তনের ফলে সমস্ত দোকানগুলিকে একত্রিত করে একটি ছোট এলাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। ফলে এখন ওই দোকানগুলোতে বেশি যাত্রী দেখা যাচ্ছে।
এক কর্মকর্তা জানান “আন্তর্জাতিক যাত্রীদের সংখ্যা খুব কম, এবং এ কারণে দোকানগুলো অনেকটাই খালি বা বন্ধ থাকত। তবে ফ্লোর প্ল্যান পরিবর্তনের ফলে অনেক পপ-আপ স্টোর তৈরি করা হয়েছে এবং সকল দোকানকে একত্রিত করা হয়েছে, যা বাজারকে অনেক জমজমাট করে তুলেছে।”
যাত্রীদের অভিজ্ঞতা
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করা আইশ্বর্য মুখোপাধ্যায় কলকাতা থেকে দুবাই হয়ে লন্ডন যাচ্ছিলেন মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে। তিনি জানিয়েছেন “পূর্বে ডিউটি-ফ্রি এলাকা ছিল অন্ধকার এবং বেশিরভাগ দোকান বন্ধ থাকত। সেখানে শুধু মদ এবং চকলেট বিক্রি হতো। কিন্তু এইবার আমি বেশ কিছু ছোট দোকান দেখলাম এবং ডিউটি-ফ্রি পারফিউমের দোকানটি ছিল জমজমাট।”
তিনি আরও বলেন, “বিস্ব বাংলা স্টোরসহ তিনটি দোকান ছিল এবং সবগুলিই ভিড় করছিল। আমি একটি হ্যান্ডব্যাগও কিনেছি। এছাড়া খাবারের জন্য আগে বড় সমস্যা ছিল, কিন্তু এবার আমি কফি এবং ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস খেয়েছি। এটি অনেক ভালো অভিজ্ঞতা ছিল।”
কিছু সমস্যা
তবে কিছু দোকান এখনও পুনঃনির্মাণের কাজের জন্য অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশেষ করে, মদ এবং চকলেটের দোকানগুলো বর্তমানে যাত্রীদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য নয়। এক কর্মকর্তা জানান, “ডিউটি-ফ্রি মদ দোকানের আশপাশের এলাকা এখন সিকিউরিটি কাউন্টার তৈরির জন্য করডন করা হয়েছে। ফলে অনেক যাত্রী সেখানে মদ কিনতে পারেননি।”
এক যাত্রী জানান, “আমি সিঙ্গাপুর যাচ্ছিলাম এবং সেখানে মদ কিনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দোকানটি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এখন সিকিউরিটি চেক-ইন কাউন্টারগুলি সম্পূর্ণ হলে মদ দোকানটি সহজেই প্রবেশযোগ্য হবে।”
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের জন্য আরও উন্নত পরিষেবা প্রদান করতে তারা ভবিষ্যতে আরও কিছু পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। বিশেষত যাত্রীদের সুবিধার্থে খাবার ও পানীয়ের দোকানগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং শপিং এলাকার জন্য আরও আধুনিক পরিবেশ তৈরি করা হবে।
কলকাতা বিমানবন্দরের এই নতুন পরিকল্পনা এবং পরিবর্তনগুলি যাত্রীদের জন্য একটি সহজ, সুন্দর এবং জমজমাট অভিজ্ঞতা প্রদান করবে, যা সারা বিশ্বে কলকাতা বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক সেকশনের চেহারা আরও আধুনিক এবং আকর্ষণীয় করে তুলবে।