সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো প্রকল্পের ১৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের থেকে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে কলকাতার একটি বিএসএনএল কারখানা। ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (BSNL) সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কলকাতার অন্যতম মূল্যবান রিয়েল এস্টেট সম্পদ, ৭৮০ কাঠার একটি কারখানা জমি ১৯০০ কোটি টাকায় বিক্রি করবে।
কারখানার অবস্থান ও মূল্য
বিএসএনএলের এই কারখানা জমিটি কলকাতার এজেসি বোস রোড এবং আলিপুর রোডের সংযোগস্থলে অবস্থিত। জমিটির ৭৮০ কাঠা এলাকা থাকলেও এর মধ্যে ৬৩০ কাঠা জমি ডেভেলপমেন্টের উপযোগী। শহরের কেন্দ্রে থাকা এই জমি বর্তমানে অন্যতম আকর্ষণীয় রিয়েল এস্টেট ডিল হিসেবে ধরা হচ্ছে।
বড় ডেভেলপারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা
এই জমির জন্য বিভিন্ন বড় ডেভেলপার সংস্থা প্রতিযোগিতায় রয়েছে। সম্ভাব্য দরদাতাদের তালিকায় রয়েছেন ফিনিক্স, টাটা হাউসিং, সাউথ সিটি এবং প্রাইমার্ক-আরডিবি। জমিটির অবস্থান, আকার এবং সম্ভাব্য উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে এটি রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
একটি ঐতিহাসিক রিয়েল এস্টেট ডিলের দিকে
এই জমি বিক্রির ডিলটি কলকাতার রিয়েল এস্টেট বাজারে একটি মাইলফলক হতে চলেছে। রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞদের মতে, কলকাতার কেন্দ্রে এরকম একটি বড় জমি খুব কমই পাওয়া যায়। বিশেষত, শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোর নিকটবর্তী অবস্থান এবং প্রাইম লোকেশন হওয়ায় জমিটির দাম অত্যন্ত উঁচুতে উঠেছে।
সিঙ্গুরের টাটার বিনিয়োগের তুলনা
এই জমি বিক্রির সম্ভাব্য মূল্য ১৯০০ কোটি টাকা, যা সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো কারখানার জন্য বিনিয়োগ করা ১৫০০ কোটি টাকার থেকেও বেশি। সিঙ্গুরে টাটার বিনিয়োগ তখনকার সময়ে পশ্চিমবঙ্গে অন্যতম বড় শিল্প বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়েছিল। কিন্তু এই বিএসএনএল কারখানার জমি বিক্রি সেই বিনিয়োগের থেকেও বড় আর্থিক চুক্তি হতে চলেছে।
বিএসএনএলের আর্থিক সংকট এবং বিক্রির প্রয়োজন
বিএসএনএল বেশ কয়েক বছর ধরেই আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। সংস্থার পরিষেবা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য বড় মাপের বিনিয়োগের প্রয়োজন। তাই সংস্থাটি তাদের অপ্রয়োজনীয় বা অনুৎপাদনশীল সম্পত্তিগুলি বিক্রি করে এই সংকট কাটানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। কলকাতার এই জমি বিক্রি সেই উদ্যোগেরই একটি অংশ।
পরিকল্পিত উন্নয়নের সম্ভাবনা
জমিটির ডেভেলপমেন্টে বিলাসবহুল আবাসন, শপিং মল, এবং অফিস কমপ্লেক্স তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। জমির কৌশলগত অবস্থান এটি আবাসিক এবং বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত লাভজনক করে তুলেছে। বড় ডেভেলপাররা ইতোমধ্যেই জমিটি কেনার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন।
স্থানীয় বাজারে প্রভাব
এই জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত কলকাতার রিয়েল এস্টেট বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বড় মাপের এই ডিল শহরের কেন্দ্রে উন্নয়নের সম্ভাবনা বাড়াবে এবং আশেপাশের এলাকাগুলোর সম্পত্তির মূল্যও বৃদ্ধি পাবে।
বিএসএনএলের কলকাতার জমি বিক্রির উদ্যোগ শুধুমাত্র একটি রিয়েল এস্টেট ডিল নয়, এটি শহরের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ১৯০০ কোটি টাকার এই ডিল একদিকে যেমন বিএসএনএলের আর্থিক সংকট মেটাতে সাহায্য করবে, অন্যদিকে কলকাতার রিয়েল এস্টেট বাজারে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে। এই জমি বিক্রির প্রক্রিয়া এবং পরবর্তী উন্নয়ন শহরের ভবিষ্যতের দিকে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে।