সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে নজর, বিজেপির কৌশল বদলের ইঙ্গিত

শমীক ভট্টাচার্য রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর থেকে বিজেপি-র (bjp) রাজনৈতিক কৌশলে এক নতুন মোড় এসেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দীর্ঘদিন ধরে বাংলায় (bjp) বিজেপি-কে…

Saree Gifts on Mahalaya: BJP’s Festive Move to Win Women’s Hearts

শমীক ভট্টাচার্য রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর থেকে বিজেপি-র (bjp) রাজনৈতিক কৌশলে এক নতুন মোড় এসেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দীর্ঘদিন ধরে বাংলায় (bjp) বিজেপি-কে ঘিরে একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল—দলটি কেবলমাত্র উগ্র হিন্দুত্বকেই হাতিয়ার করছে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটকে একপ্রকার উপেক্ষাই করছে। কিন্তু শমীকের নেতৃত্বে সেই ভাবনাতেই ধীরে ধীরে পরিবর্তনের ছাপ স্পষ্ট হচ্ছে।

Advertisements

রাজ্য বিজেপির প্রতিটি জনসভা বা সাংবাদিক বৈঠকে শমীক নিয়ম করে বার্তা দিচ্ছেন—ভারতীয় মুসলমানদের সঙ্গে বিজেপির কোনও বিরোধ নেই। সংখ্যালঘুদের প্রতি আস্থা ফেরাতে তাঁর এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। শুধু শমীকই নন, তাঁর এই অবস্থানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও সাম্প্রতিক সময়ে ভিন্ন সুরে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। একসময় যিনি সরাসরি মুসলিম ভোটকে বিজেপির জন্য অপ্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেছিলেন, তিনিই এখন বলছেন—“ভারতীয় মুসলমানরা আমাদের শত্রু নন।” রবিবার কলকাতার তারাতলার মঞ্চ থেকেও শুভেন্দু স্পষ্ট জানিয়ে দেন, মুসলমানরা যাকে খুশি ভোট দিতে পারেন, তাতে বিজেপির কোনও আপত্তি নেই।

   

এই পরিবর্তিত অবস্থান নিছক রাজনৈতিক ভদ্রতা নয়, বরং আগামী দিনের নির্বাচনী কৌশলেরই অংশ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী তালিকায় সংখ্যালঘু মুখ ছিল একেবারেই সীমিত—২৯৪ আসনের মধ্যে ১০ জনেরও কম। অথচ বাংলার মোট ভোটারদের প্রায় ৩০ শতাংশই মুসলমান। ফলে প্রার্থী তালিকায় সংখ্যালঘুদের উপেক্ষা বিজেপির জন্য বড় রাজনৈতিক ভুল ছিল বলে অনেকের মত।

২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি(bjp) এই ভুলের ফল ভোগ করেছে। ২০১৯ সালে বাংলায় ১৮টি আসন পাওয়ার পর তাদের আত্মবিশ্বাস ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু এবারের লোকসভা ভোটে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়াল ১২-তে। বিশেষত দক্ষিণবঙ্গের একাধিক মুসলিমপ্রধান এলাকায় বিজেপি-র ফল ভয়াবহ খারাপ হয়েছে। উগ্র হিন্দুত্বের লাইন নিয়ে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটানোর চেষ্টা সত্ত্বেও তা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আনতে পারেনি। বরং উল্টে সংখ্যালঘু ভোট আরও বেশি করে শাসকদল তৃণমূলের দিকে সরে গিয়েছে।

এই ব্যর্থতা থেকেই শিক্ষা নিয়েই বিজেপি (bjp) এবার নিজেদের কৌশল পাল্টাতে চাইছে। সূত্রের খবর, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে সংখ্যালঘু সমাজের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দিতে চাইছে তারা। সেই কারণে বিজেপির প্রার্থী তালিকায় এ বার অনেক বেশি সংখ্যালঘু মুখ দেখা যেতে পারে। বিশেষত মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, নদিয়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো জেলাগুলিতে মুসলিম প্রার্থীদের প্রাধান্য দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

তবে এই পরিবর্তন কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক মহলের বড় অংশের মধ্যে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি-কে মুসলমান বিরোধী দল হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। রাজ্যের মুসলিম সমাজের বড় অংশ এখনও মনে করে, বিজেপি এ রাজ্যে এলে তাদের নিরাপত্তা ও অধিকার প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। এই মানসিকতা ভাঙা সহজ নয়। শমীক ও শুভেন্দুর সাম্প্রতিক নরম অবস্থান যদি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অঙ্গ হয়, তবে হয়তো ধীরে ধীরে সেই ভ্রান্ত ধারণা কাটানো সম্ভব হতে পারে।

বিজেপি-র(bjp) ভেতরেও এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। একাংশ মনে করছেন, বিজেপি-র আসল শক্তিই হলো হিন্দুত্বের লাইন, সেটি ছেড়ে দিলে দলের মূল ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরতে পারে। অন্যদিকে, আরেকদল মনে করেন, বাংলার বিশেষ সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংখ্যালঘু ভোটকে উপেক্ষা করে কোনও দলই দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে পারবে না। তাই রাজনৈতিক বাস্তবতাকে মানতেই হবে।

সব মিলিয়ে, বাংলার বিজেপি যে কৌশল বদলের পথে হাঁটছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। এবার দেখার বিষয়, ২০২৬ বিধানসভা ভোটে সত্যিই কতটা সংখ্যালঘু প্রার্থী তাঁরা দেন, এবং সেই পদক্ষেপ আদৌ সংখ্যালঘু সমাজকে কাছে টানতে পারে কি না। কিন্তু এটুকু স্পষ্ট, শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে বিজেপি-র প্রচারে এক নতুন সুর এসেছে—যা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।