রাজ্য রাজনীতিতে ফের শোরগোল ফেলে দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) । শনিবার নবান্ন অভিযানে যোগ দিয়ে তিনি এক বক্তব্যে বলেন, “বিহারের মতো বাংলার ভোটার তালিকাতেও খেলা হবে।” এই মন্তব্যের পরই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বিরোধী শিবিরের দাবি, এই মন্তব্যই প্রমাণ করছে বিজেপি নির্বাচন কমিশনকে হাতিয়ার করে বাংলার ভোটার তালিকায় কারচুপির ছক কষছে। অন্যদিকে বিজেপি শিবির বলছে, শুভেন্দু (Suvendu Adhikari) কেবল কথার তোড়ে বলেছেন, এর মধ্যে বিশেষ কোনও উদ্দেশ্য নেই।
ঘটনার সূত্রপাত হয় বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ থেকে। ‘স্পেশাল ইনসেনটিভ রিভিশন’ বা ‘সার’–এর অজুহাতে বিহারে ভোটার তালিকায় নাকি ব্যাপক কারচুপি করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন— এমনই দাবি বিরোধীদের। সংসদ ও সংসদের বাইরে এই ইস্যুতে তারা সরব হয়েছে। বাংলায়ও একই ধরনের পদক্ষেপের আশঙ্কা প্রকাশ করে তৃণমূল ও অন্যান্য বিরোধী দল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এ রাজ্যে সেই চেষ্টা সফল হবে না।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবারই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, বাংলায় চুপিসারে ভোটের কারচুপি হবে না। “একটা মানুষের ভোটাধিকারও যদি কাড়া হয়, আমরা এক লক্ষ বাঙালিকে নিয়ে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের অফিস ঘেরাও করব।” তাঁর এই বার্তার পরদিনই শুভেন্দুর মন্তব্য বিরোধীদের হাতে যেন নতুন অস্ত্র তুলে দিল।
নবান্ন অভিযানে অংশ নিয়ে শুভেন্দু(Suvendu Adhikari) বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “নির্বাচন কমিশন বুঝে নেবে। বিহারের মতো ভোটার তালিকাতেই খেলা হবে।” এই বক্তব্যে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে। যদিও তারা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও দলের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, শুভেন্দু কেবল রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন, এর মধ্যে কোনও ষড়যন্ত্র নেই। কিন্তু তৃণমূল এই সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নয়।
শনিবার তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডল থেকে শুভেন্দুর বক্তৃতার ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়েছে, “নির্বাচন কমিশন যে বিহারে খেলছে, সেটা প্রকাশ্যেই কবুল করে নিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। এবার বাংলার ভোটার তালিকাতেও কারচুপি করার পরিকল্পনা বিজেপির।” তৃণমূলের যুক্তি, যখন নির্বাচন কমিশনের মতো ‘রেফারি’ কোনও দলের পক্ষ নেয়, তখন প্রথম আঘাত লাগে গণতন্ত্রে।
তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা যে অভিযোগ এতদিন ধরে করছি, শুভেন্দু নিজেই সেটা স্বীকার করে নিলেন। এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কিছু হতে পারে না।” তিনি আরও দাবি করেন, বিজেপি বিহারের কৌশল বাংলায় প্রয়োগ করতে চাইছে, কিন্তু তা সফল হবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্য কেবল এক দিনের বিতর্কে সীমাবদ্ধ থাকবে না। নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা নিয়ে এমন সংবেদনশীল মন্তব্য রাজনীতিতে উত্তাপ আরও বাড়াবে। কারণ ভোটার তালিকা নিয়ে কোনওরকম কারচুপির অভিযোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে সরাসরি আস্থা সংকট তৈরি করে।
অন্যদিকে, বিজেপির ভেতরে কেউ কেউ মনে করছেন, বিরোধী দলনেতার এই মন্তব্য বিরোধীদের হাতে অকারণে ইস্যু তুলে দিল। তবে শুভেন্দু অধিকারী এখনও পর্যন্ত নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার বা ব্যাখ্যা দেননি।
সব মিলিয়ে, বিহারের ভোটার তালিকা বিতর্ক থেকে শুরু করে বাংলার আসন্ন ভোট— দুই জায়গাতেই এখন নজর রাজনৈতিক মহলের। আর শুভেন্দুর ‘খেলা হবে’ মন্তব্য সেই নজর আরও তীব্র করে দিল বলেই মনে করছেন অনেকেই।