বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের বিয়ে ঘিরে রাজনৈতিক চর্চা তুঙ্গে

বঙ্গ রাজনীতির দাপুটে নেতা, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পশ্চিমবঙ্গ ইউনিটের প্রাক্তন সভাপতি এবং মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) শুক্রবার (১৮ এপ্রিল ২০২৫) বিয়ের…

Dilip Ghosh to Get Married

বঙ্গ রাজনীতির দাপুটে নেতা, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পশ্চিমবঙ্গ ইউনিটের প্রাক্তন সভাপতি এবং মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) শুক্রবার (১৮ এপ্রিল ২০২৫) বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছেন। সূত্রের খবর, নিউটাউনে তাঁর নিজ বাসভবনে গোধূলি লগ্নে এই বিয়ে সম্পন্ন হবে। তবে এটি ঐতিহ্যবাহী সাত পাকের বিয়ে হবে না, বরং আইনি রেজিস্ট্রি মাধ্যমে দুজনের জীবন এক হবে। পাত্রী রিঙ্কু মজুমদার, যিনি বিজেপির কলকাতা উত্তর শহরতলি সাংগঠনিক জেলা মহিলা মোর্চার সঙ্গে যুক্ত। এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বঙ্গ রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আলোড়ন।

Advertisements

দিলীপ ঘোষ, যিনি তাঁর ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ ভাবমূর্তি এবং তীক্ষ্ণ মন্তব্যের জন্য পরিচিত, এবার জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলেছেন। ৬০ বছর বয়সে এই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন। সূত্র জানায়, রিঙ্কু মজুমদারের সঙ্গে দিলীপের আলাপ বিজেপির কাজের সূত্রেই। রিঙ্কু, যিনি বিবাহবিচ্ছিন্না এবং একজন ২৫ বছর বয়সী পুত্রের জননী, নিউটাউনের বাসিন্দা। তাঁর ছেলে সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মরত। দিলীপের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, এই বিয়ের পিছনে তাঁর মা পুষ্পলতা ঘোষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মা নাকি দিলীপকে বলেছিলেন, “আমি না থাকলে তোকে কে দেখবে?” এই কথাই দিলীপকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছে।

   

দিলীপের নিউটাউনের ফ্ল্যাটে তাঁর মা ইতিমধ্যে এসেছেন। রিঙ্কু নিজেও পুষ্পলতার সঙ্গে কথাবার্তা বলে তাঁকে বিয়ের জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে। বিয়ের অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত ঘরোয়া হবে। দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন, এবং আড়ম্বর এড়িয়ে রেজিস্ট্রি মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হবে। দিলীপের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, তিনি আড়ম্বরে বিশ্বাস করেন না, তাই আমন্ত্রিতদের সংখ্যাও সীমিত রাখা হয়েছে।

তবে, এই বিয়ে নিয়ে বিজেপির অন্দরে এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) একাংশের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সূত্রের খবর, দলের কিছু নেতা এবং আরএসএস-এর কেউ কেউ দিলীপকে বিয়ে না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁদের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বিয়ে দিলীপের জনমানসে ভাবমূর্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, দিলীপের ‘অকৃতদার’ পরিচয় এবং আরএসএস প্রচারক হিসেবে তাঁর অতীত জীবন তাঁর সমর্থকদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ইমেজ তৈরি করেছিল। তবে, দিলীপ এই পরামর্শ উপেক্ষা করে নিজের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, মায়ের ইচ্ছা পূরণ এবং জীবনের এই বৃত্ত পূর্ণ করার জন্যই তিনি এই ‘সাহসী’ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দিলীপের বিয়ের খবর বঙ্গ রাজনীতিতে ‘টক অফ দ্য টাউন’ হয়ে উঠেছে। এমনকি তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কুণাল ঘোষও এক্স হ্যান্ডেলে দিলীপকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, “দিলীপ ঘোষকে ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা। এর মধ্যে রাজনীতি খুঁজবেন না।” তবে, বিজেপির অন্দরে দিলীপের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে একাংশ হতাশ। দিলীপের ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠী বা ‘দিলীপ গোষ্ঠী’ মনে করছে, এই বিয়ে তাঁর রাজনৈতিক ইমেজের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

Advertisements

দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক যাত্রা বরাবরই আলোচনার বিষয়। ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি বঙ্গ বিজেপির সভাপতি ছিলেন এবং তাঁর নেতৃত্বে দল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসন জিতেছিল। তবে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে হেরে যাওয়ার পর তিনি বর্তমানে কোনো সাংগঠনিক পদে নেই। সম্প্রতি ত্রিপুরায় বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে, রাজনীতির পাশাপাশি তিনি কৃষি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ড্রাগন ফল চাষে, নতুন সম্ভাবনা খুঁজছেন।

দিলীপের এই বিয়ে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। গত ৩ এপ্রিল ইডেন গার্ডেন্সে কেকেআরের আইপিএল ম্যাচ দেখার সময় ক্লাব হাউসের বক্সে দিলীপ, রিঙ্কু এবং তাঁদের নিকটজনেরা একসঙ্গে ছিলেন। সেখানেই নাকি বিয়ের ‘পাকা কথা’ হয়। এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, দিলীপ এবং রিঙ্কুর সম্পর্ক বেশ কিছুদিন ধরেই গড়ে উঠেছে।

দিলীপ ঘোষের বিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা হলেও, এটি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। মায়ের ইচ্ছা পূরণ এবং জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার জন্য তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বিয়ে তাঁর রাজনৈতিক ভাবমূর্তির উপর কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে। বর্তমানে, দিলীপ এবং রিঙ্কুর এই নতুন যাত্রা বঙ্গ রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।