দুপুর ২টো নাগাদ শুরু হয়েছিল বিজেপির এক গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক বৈঠক। খড়্গপুরে আয়োজিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব সহ জেলার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। শুরুতেই সেখানে উপস্থিত হন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা প্রাক্তন মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ। তবে মাত্র ২৫ মিনিটের মধ্যেই তিনি বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান। আর বেরোনোর সময় দিলীপের একটি সংক্ষিপ্ত মন্তব্য ঘিরেই শুরু হয়েছে জোর জল্পনা — “জলও খেলাম না।”
এই বক্তব্য আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ হলেও, রাজনৈতিক মহলে তা গভীর বার্তার ইঙ্গিত বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি দিলীপ ঘোষ এই বৈঠকে নিজেকে উপযুক্ত সম্মান পাচ্ছেন না বলেই এমন প্রতিক্রিয়া দিলেন? না কি দলীয় ভিতরে কোনও অসন্তোষ জমে আছে, যার ইঙ্গিত দিচ্ছেন দিলীপ? পরিস্থিতি ঘিরে বিজেপির অন্দরে বিতর্ক তুঙ্গে।
বৈঠকে দিলীপ ঘোষের উপস্থিতি নিয়ে সতর্ক মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “মেদিনীপুরের সংগঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের নিয়ম অনুযায়ী, দিলীপদা বৈঠকে আসতেই পারেন। তিনি প্রাক্তন সাংসদ এবং প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। তাঁকে স্বাগত জানানো হয়েছে।” যদিও তাঁর বক্তব্যের সুরে স্পষ্ট, দিলীপের এই আচরণ দলের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল না।
এই মুহূর্তে মেদিনীপুর জেলার বিজেপি সংগঠনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত রাজ্য নেতৃত্ব জেলার নতুন কমিটি ঘোষণা করেনি। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিষয়েই জেলা সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করতে রাজ্য নেতৃত্ব খড়্গপুরে উপস্থিত হন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিজেপির নেতারা।
তবে একটি বিষয় উঠে এসেছে যা পরিস্থিতিকে আরও স্পষ্ট করে। বর্তমানে মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি সুমিত মণ্ডল দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ। শুধু তাই নয়, জেলার ২৬টি মণ্ডলের মধ্যে ২০-২২টি মণ্ডলের সভাপতি দিলীপ অনুগামী বলেই দাবি বিজেপি অন্দরের। ফলে জেলা কমিটি গঠনের সময়েও দিলীপ অনুগামীদেরই প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এই প্রসঙ্গে বিজেপির এক প্রবীণ নেতার বক্তব্য, “জেলা সভাপতি থেকে অধিকাংশ মণ্ডল সভাপতি যেখানে দিলীপদার ঘনিষ্ঠ, সেখানে জেলা কমিটিতেও তাঁর লোকজনকেই জায়গা দেওয়ার চেষ্টা হবে — এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা হলে দলের পুরোনো, ত্যাগী এবং লড়াকু কর্মীদের বাদ পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। আর তার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে আগামী নির্বাচনে।”
সত্যিই, মেদিনীপুর জেলা বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই অভ্যন্তরীণ বিভাজনের শিকার। একদিকে দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠদের প্রভাব, অন্যদিকে রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে নতুন মুখ তুলে আনার প্রয়াস — এই দ্বন্দ্বই সাংগঠনিকভাবে বিজেপিকে দুর্বল করে তুলছে বলে মত অনেকের। দিলীপ ঘোষের হঠাৎ এসে জল না খাওয়ার ইঙ্গিত, যেন সেই অস্বস্তিরই প্রকাশ।
শেষ পর্যন্ত জেলা কমিটি গঠনে কারা স্থান পান, সেই দিকেই তাকিয়ে দলীয় কর্মীরা। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট — দিলীপ ঘোষ এখনও মেদিনীপুরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর, এবং তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে জেলা সংগঠন সাজানো হলে, সেই অস্বস্তির ঢেউ রাজ্য নেতৃত্বকেও নাড়িয়ে দিতে পারে।