‘বিরোধ মানেই ব্যক্তিগত শত্রুতা নয়’, রাজনৈতিক সৌজন্যের পাঠ দিলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য

সম্প্রতি দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের উপস্থিতি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিজেপির (Bikashranjan…

Bikashranjan Bhattacharya Defends Dilip Ghosh: 'If Mamata Invites Me, I’ll Go Too' — Says He Did No Wrong

সম্প্রতি দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের উপস্থিতি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিজেপির (Bikashranjan Bhattacharya) অন্দরে বিষয়টি নিয়ে তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী—দিলীপ ঘোষের পদক্ষেপ নিয়ে তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ্যে এসেছে।

তবে বিজেপির এই অভ্যন্তরীণ বিরোধের মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন সিপিএম নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য (Bikashranjan Bhattacharya) । তাঁর মতে, দিলীপ ঘোষ কোনও ভুল করেননি। বরং রাজনৈতিক শিষ্টাচার এবং ব্যক্তিগত সৌজন্য বজায় রেখেই তিনি কাজ করেছেন। বিকাশবাবুর বক্তব্য অনুযায়ী, “রাজনৈতিক বিরোধিতা কখনও ব্যক্তিগত স্তরে নামিয়ে আনা উচিত নয়।”

   

বিকাশরঞ্জনের (Bikashranjan Bhattacharya) এমন অবস্থান রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন তুলেছে। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রী যদি আমাকে কোনও অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করেন, আমি নিশ্চয়ই যাব। সৌজন্যের খাতিরেই যাব। রাজনৈতিক লড়াই রাজনৈতিক পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, তা ব্যক্তিগত সম্পর্কে ছায়া ফেললে সমাজে বিভেদ বাড়ে।”

তিনি আরও বলেন, “আজ যারা দিলীপবাবুর বিরোধিতা করছেন, তারা যদি আরএসএসের কাঠামো বোঝেন, তাহলে জানবেন দিলীপ ঘোষ সেই পথেই (Bikashranjan Bhattacharya) হেঁটেছেন। মন্দির নির্মাণ আরএসএসের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ। শুভেন্দু অধিকারীও সেই মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তরের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আজ যারা দিলীপবাবুকে দোষ দিচ্ছেন, ভবিষ্যতে নাগপুর থেকে একটি ফোন এলেই আবার সমর্থন করবেন।”

এই বক্তব্য যে নিছক মতবিরোধ নয়, বরং একটা বৃহত্তর সামাজিক-রাজনৈতিক বার্তা বহন করে, তা স্পষ্ট করেছেন বিকাশরঞ্জন। তিনি উদাহরণ টেনেছেন অতীতের রাজনীতিক সম্পর্কের। যেমন জ্যোতিবসু ও বিধান রায়ের সম্পর্ক বা প্রমোদ দাশগুপ্ত ও প্রফুল্ল সেনের মধ্যে ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরেছেন।

বিকাশ বলেন, “রাজনৈতিক মতভেদ থাকা সত্ত্বেও অতীতে নেতারা একে অপরকে সম্মান করতেন। আজ সেই সৌজন্য হারিয়ে যাচ্ছে। ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের রাজনৈতিক মতভেদ হলেও কি পরিবার ভেঙে যায়? রাজনৈতিক মত এক না হলেই কি ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে?”

এই বক্তব্যে সমাজে রাজনৈতিক (Bikashranjan Bhattacharya) সংস্কৃতির অবক্ষয়ের ইঙ্গিত স্পষ্ট। তিনি বলেন, “একটা নতুন ধারা তৈরি হচ্ছে যেখানে রাজনৈতিক বিরোধিতাকে ব্যক্তিগত বিদ্বেষে পরিণত করা হচ্ছে। এটা সভ্যতা-বিরোধী।”

বিকাশবাবু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি অতীতে বিভিন্ন ইস্যুতে কড়া সমালোচনা করেছেন—বিশেষত চাকরিহারা ইস্যুতে। কিন্তু তাঁর মতে, রাজনৈতিক সমালোচনা আর ব্যক্তিগত সম্পর্ক এক নয়। “আমি চাই, রাজনৈতিক বিরোধিতা প্রকাশ্যে হোক, গোপনে ছুরি মারা নয়,”—এমনই তাঁর মন্তব্য।

এই প্রেক্ষাপটে দিলীপ ঘোষের দিঘা সফরকে তিনি ব্যক্তিগত ‘জয়’ নয়, বরং রাজনৈতিক সৌজন্যের উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। একই সঙ্গে সতর্ক করছেন, “এই ধরনের ব্যক্তিগত (Bikashranjan Bhattacharya) আক্রমণের ধারা যদি চলতে থাকে, তাহলে রাজনীতি থেকে সভ্যতা হারিয়ে যাবে।”

এই বিতর্ক আমাদের মনে করিয়ে দেয়, রাজনীতি শুধু মতবাদের লড়াই নয়, এটা (Bikashranjan Bhattacharya) সহাবস্থানেরও জায়গা। মতের ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু সম্পর্কের মধ্যে সৌজন্য থাকা উচিত। বিরোধিতা করতেই হবে, তবে তা যেন ব্যক্তি নয়, নীতির বিরুদ্ধে হয়—এই বার্তাই যেন বারবার উঠে আসে বিকাশরঞ্জনের কণ্ঠে।