কলকাতা সহ আশপাশের এলাকায় দমকল (Fire Services) বিভাগকে আরও দ্রুত ও কার্যকর করার লক্ষ্যে এবার নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। শহরে ও শহরতলিতে ক্রমবর্ধমান অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় গতিবৃদ্ধির জন্য এবার তৈরি হচ্ছে বিশেষ ‘গ্রিন করিডর’। পাশাপাশি, প্রতিটি দমকল গাড়িতে সংযোজন হচ্ছে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম, আধুনিক কন্ট্রোল রুম এবং ২৫টি নতুন ফায়ার স্টেশন।
এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা রাজ্যের অগ্নিনির্বাপন ও আপৎকালীন পরিষেবা দফতরের মন্ত্রী সুজিত বসু। শুক্রবার কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই উদ্যোগের ঘোষণা করেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা, হাওড়া, বিধাননগর ও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের প্রতিনিধিরাও।
মূল উদ্যোগগুলো কী কী?
জরুরি পরিস্থিতিতে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার পর দমকল গাড়ির গতি বাধাহীন রাখতে পুলিশ আগেভাগেই রাস্তাগুলি পরিষ্কার করে দেবে। এতে সময় অপচয় কমবে, দ্রুত পৌঁছানো যাবে দুর্ঘটনাস্থলে।
প্রতিটি দমকলের গাড়িতে বসানো হবে জিপিএস সিস্টেম, যার মাধ্যমে কন্ট্রোল রুম জানতে পারবে কোন গাড়ি কোথায় রয়েছে, কী গতিতে চলছে, কোন রাস্তায় এগোচ্ছে – ফলে রিয়েল টাইমে নজরদারি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে।
দমকল ও পুলিশের মধ্যে দ্রুত সমন্বয়ের জন্য তৈরি হবে একটি অভিন্ন আধুনিক কন্ট্রোল রুম। সেখানে থাকবে ২৪ ঘণ্টার নজরদারি ব্যবস্থা ও নিরবচ্ছিন্ন কমিউনিকেশন সিস্টেম। SOS সিগন্যাল পাওয়ার সঙ্গেসঙ্গে নির্দেশ চলে যাবে সংশ্লিষ্ট দফতরে।
এই বৈঠকে আরও একটি বড় সিদ্ধান্ত হল – রাজ্যে ২৫টি নতুন ফায়ার স্টেশন তৈরি করা হবে। নতুন স্টেশনগুলির মধ্যে বেশ কিছু শহরতলি ও ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে তৈরি হবে, যেখানে এখনও পর্যাপ্ত দমকল পরিকাঠামো নেই।
এই উদ্যোগের মূল অনুপ্রেরণা বলা যায় খিদিরপুর বাজার ও মেছুয়া হোটেলের মর্মান্তিক ঘটনা। খিদিরপুরে শতাধিক দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং মেছুয়া হোটেলে ১৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এই দুই ঘটনাতেই অভিযোগ ছিল দমকলের দেরিতে পৌঁছনো এবং পর্যাপ্ত সমন্বয়ের অভাব। সেই কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়।
সরকার চাইছে, ভবিষ্যতে যেন এমন পরিস্থিতি না ঘটে। তাই আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ও সময়মতো সাড়া দেওয়ার মতো একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।
এই নতুন ব্যবস্থাগুলি চালু হলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একদিকে যেমন প্রযুক্তিনির্ভর ট্র্যাকিং, অন্যদিকে গ্রিন করিডরের মতো দ্রুতগামী ব্যবস্থা – সব মিলিয়ে এই উদ্যোগ নাগরিক সুরক্ষায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলেই মনে করছে রাজ্য প্রশাসন।
শেষ কথা, কলকাতা শহর আগুন নেভাতে আর পিছিয়ে পড়বে না – প্রতিক্রিয়া হবে ঝড়ের বেগে, সমন্বয় হবে প্রযুক্তির ছোঁয়ায়। এই উদ্যোগ যে ভবিষ্যতে বহু প্রাণ বাঁচাবে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।