বিজেপি নেতৃত্ব বারবার দাবি করে এসেছে— “বিজেপি যা ভাবে, তা করে দেখায়।” সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ তারই প্রমাণ দিয়েছে। অপারেশন সিঁদুর তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত, যেখানে প্রশাসনিক দৃঢ়তা এবং রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির মিলিত প্রকাশ ঘটেছে। বাংলার জন্য বিজেপির লক্ষ্য কেবল রাজনীতি নয়, বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি এবং স্বকীয়তার উন্নয়ন।
বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা প্রদান করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এটি কেবলমাত্র একটি সরকারি সিদ্ধান্ত নয়, বাংলার ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি জানানোর প্রতীক। বিজেপির দাবি, বাংলার সংস্কৃতি, সাহিত্য, শিল্প ও শিক্ষাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে তারা নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে বিজেপির অঙ্গীকার— বাংলার প্রতিটি যুবককে এমন সুযোগ তৈরি করে দেওয়া, যাতে কর্মসংস্থানের জন্য তাকে অন্যত্র পাড়ি জমাতে না হয়। শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি, পর্যটন এবং শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়ন ঘটিয়ে রাজ্যে কর্মসংস্থানের নতুন দরজা খুলতে বিজেপি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
কিন্তু উন্নয়নের এই পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হিসেবে বিজেপি দেখছে অনুপ্রবেশ সমস্যাকে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, দেশের সবচেয়ে বড় চিন্তা আজ অনুপ্রবেশকারীদের বাড়বাড়ন্ত। তারা শুধু বাংলার জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট করছে না, বরং রাজ্যের অর্থনীতি, সমাজ ও পরিকাঠামোতেও মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করছে। বিজেপির অভিযোগ, অনুপ্রবেশকারীরা স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে। ফলে বাংলার যুব সমাজ বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।
শুধু চাকরি নয়, নারী নির্যাতন, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক অস্থিরতার সঙ্গেও অনুপ্রবেশকারীদের যুক্ত করছেন বিজেপি নেতারা। তাদের স্পষ্ট বার্তা— এদেশে থেকে এই ধরণের অপরাধমূলক কার্যকলাপ কেউ চালাতে পারবে না। ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী কোনো গোষ্ঠীকে দেশে থাকতে দেওয়া হবে না।
এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। বিজেপি নেতৃত্ব বলেছে, ভারত সরকার ইতিমধ্যেই বৃহৎ অভিযান শুরু করেছে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত ও নির্মূল করার জন্য। এই পদক্ষেপ দেশব্যাপী নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে অপরিহার্য। কিন্তু এরই মধ্যে বিরোধী ইন্ডি জোটকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, ইন্ডি জোট তুষ্টিকরণের রাজনীতিতে মেতে থেকে অনুপ্রবেশকারীদের কার্যত সমর্থন করছে। ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির খাতিরে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিচ্ছে তারা।
বাংলায় অনুপ্রবেশ যে একটি বড় সামাজিক সঙ্কট তৈরি করেছে, সেটিও স্পষ্ট করে বলেছেন বিজেপি নেতারা। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলছে এই সমস্যা। দীর্ঘমেয়াদে বাংলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। বিজেপির দাবি, এই পরিস্থিতি থামাতেই হবে। এজন্যই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লালকেল্লার প্রাচীর থেকে ঘোষণা করেছিলেন ডেমোগ্রাফিক মিশন– যার লক্ষ্য দেশের জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষা করা এবং অনুপ্রবেশকারীদের প্রভাবমুক্ত করা।
বাংলার মানুষ ইতিহাস সাক্ষী, তারা সবসময় সময়ের আগেই সমস্যার আঁচ করতে পারে। বিজেপি নেতৃত্ব বিশ্বাস করে, বাংলার মানুষ ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন যে, অনুপ্রবেশকারীরা তাদের ভবিষ্যৎকে বিপদে ফেলছে। বিজেপির বার্তা স্পষ্ট— একবার সুযোগ দিন, বাংলার মাটিতে অনুপ্রবেশকারীদের আর জায়গা হবে না।
অতএব, বিজেপির বর্তমান প্রচারাভিযান শুধু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সীমাবদ্ধ নয়। এটি বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও সমাজ রক্ষার আন্দোলন হিসেবেই তারা তুলে ধরছে। বাংলার যুবসমাজকে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেওয়া, পরিকাঠামো উন্নয়ন ঘটানো এবং একই সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের কঠোরভাবে হটিয়ে দেওয়া— এই ত্রিমুখী লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে বিজেপি।
বাংলার আগামী ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে, তা নির্ভর করছে জনগণের রায়ের ওপর। বিজেপি আশাবাদী যে বাংলার মানুষ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের পাশে দাঁড়াবেন।