ছাত্র-যুবদের উজ্জীবিত করতে বাঙালি গৌরবের মন্ত্র মুখ্যমন্ত্রীর মুখে

মেয়ো রোডে বৃহস্পতিবারের ছাত্র-যুব সমাবেশ ঘিরে কার্যত নজিরবিহীন ভিড় দেখা গেল। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) প্রতিষ্ঠা দিবসে আয়োজিত এই সভায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ…

“Bengalis’ Talent Is Unmatched: Mamata Banerjee Strikes Emotional Chord at TMCP Rally”

মেয়ো রোডে বৃহস্পতিবারের ছাত্র-যুব সমাবেশ ঘিরে কার্যত নজিরবিহীন ভিড় দেখা গেল। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) প্রতিষ্ঠা দিবসে আয়োজিত এই সভায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিড়ের মাত্রা সম্পর্কে অভিষেক বলেন, “আজকের ছাত্র সমাবেশের ভিড় সর্বকালীন রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। মেয়ো রোডে এত মানুষের সমাগম কোনও দিন হয়নি।”

অভিষেকের বক্তব্যের শুরু থেকেই ছিল আক্রমণাত্মক সুর। আরজি করের তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুন মামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি ফের সরাসরি আক্রমণ শানান বিরোধীদের দিকে। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি এবং সিপিএম এই ভয়াবহ ঘটনাকে শুধু রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যবহার করছে। অভিষেক বলেন, “রাত জেগে আন্দোলন করে মানুষ ন্যায়বিচারের দাবিতে মুখ খুলেছিল। কিন্তু দিল্লির সিবিআই এক বছরেও কলকাতা পুলিশের তদন্তের বাইরে কিছু প্রমাণ করতে পারল না। আজ যারা মোমবাতি মিছিল করেছে, তাদের সম্মান জানাই। কিন্তু যারা শুধুই রাজনীতি করেছে, তাদের মানুষ ক্ষমা করবে না।”

   

শুধু আরজি কর মামলাই নয়, এদিনের মঞ্চে উঠে এলো অপরাজিতা বিল প্রসঙ্গও। দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা এই বিল এখনও কেন পাশ হলো না, সেই প্রশ্নে সুর চড়ান অভিষেক। তাঁর কটাক্ষ, “মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে এত বড় বড় কথা বলে বিজেপি। কিন্তু সংসদে অপরাজিতা বিল পাশ করাতে কেন একটাও পদক্ষেপ নেয়নি? বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম— সকলে নীরব। তাদের আসল চরিত্র মানুষ আজ বুঝে গেছে।”

এদিনের সভায় ছাত্র-যুবদের উদ্দেশে অভিষেকের বার্তা ছিল স্পষ্ট— লড়াই কেবল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নয়, লড়াই ন্যায়বিচারের জন্য, লড়াই বাঙালির গৌরবের জন্য। তিনি বলেন, “তোমরা যদি সত্যি নিজের অধিকার রক্ষা করতে চাও, তাহলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই লড়াই ভোটে জেতা-হারা নিয়ে নয়, এই লড়াই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ পরিবেশ দেওয়ার জন্য।”

অভিষেকের পর মঞ্চে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তৃতায় মূল সুর ছিল বাঙালি আত্মমর্যাদা ও গৌরব। তিনি বলেন, “বাঙালিদের মেধা, পরিশ্রম, সংস্কৃতি— এগুলিই বাংলাকে আলাদা করে চিহ্নিত করেছে। আজ ছাত্র-যুবরা যে বিপুল সংখ্যায় এখানে উপস্থিত হয়েছে, তা প্রমাণ করে আগামী দিনে বাংলার যুব শক্তিই দেশকে পথ দেখাবে।”

Advertisements

মমতা বিরোধীদের উদ্দেশে তোপ দাগতে গিয়ে বলেন, “বিজেপি বাংলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। কংগ্রেস ও সিপিএমও একই খেলায় সামিল। তারা চায় বাংলাকে কলঙ্কিত করতে। কিন্তু বাংলার মানুষ তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করবে।”

সভায় উপস্থিত ছাত্র-যুবদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান— “তোমাদের শক্তিই আমাদের সবচেয়ে বড় ভরসা। আগামী দিনে বাংলার ছাত্র সমাজ নতুন দিশা দেখাবে। বাঙালির আত্মসম্মান, সংস্কৃতি আর মেধাকে রক্ষা করতে তোমাদের এগিয়ে আসতেই হবে।”

মেয়ো রোডে এই বিপুল সমাবেশ যে আগামী দিনের রাজনীতির বার্তা বহন করছে, তা নিয়েও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল যুব শক্তিকে সংগঠিত করার বার্তা দিয়েছে। আর সেই বার্তাই এদিন স্পষ্ট হয়ে উঠল অভিষেক ও মমতার বক্তৃতায়।

শেষপর্যন্ত, অভিষেকের আক্রমণাত্মক সুর আর মমতার আবেগঘন বক্তব্য মিলিয়ে বৃহস্পতিবারের মেয়ো রোডের সমাবেশ ছিল রাজনৈতিক বার্তায় ভরপুর। আর সবচেয়ে বড় কথা, রেকর্ড ভাঙা ভিড় প্রমাণ করল যে তৃণমূল এখনও রাজ্য রাজনীতিতে প্রবল শক্তি হিসেবেই রয়েছে।