বাংলা ভাষা এখন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে শীর্ষে উঠে এসেছে। ছাপিয়ে গেছে হিন্দি ভাষাকে। এই পরিবর্তন শুধু সংখ্যার খেলা নয়, এটি বাংলাভাষী জনগণের জন্য একটি নতুন মাইলফলক। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে হিন্দি ভাষাভাষীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০৯.৫ মিলিয়ন, যেখানে বাংলা ছিল সপ্তম স্থানে, ২৭২.৮ মিলিয়ন ভাষাভাষী নিয়ে। তবে, ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলা এখন হিন্দিকে ছাপিয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে।
এই পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষার বৃদ্ধি এবং তার প্রভাবের এক স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে। বিশেষভাবে ভারত এবং বাংলাদেশে বাংলা ভাষীর মানুষের সংখ্যা ব্যাপক, এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং পূর্ব আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে বিস্তৃত বাংলা ভাষাভাষী সম্প্রদায়। বিশেষ করে সোমালিয়ায় কিছু অংশে বাংলাভাষী জনগণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ইউনেস্কো এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান সংস্থাগুলির দ্বারা তৈরি করা এই রিপোর্ট শীঘ্রই প্রকাশিত হবে, যাতে বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষীর সঠিক সংখ্যা তুলে ধরা হবে। রিপোর্টে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ এবং মুম্বাইয়ের বাংলাভাষী জনগণের তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলা বাংলা ভাষীর জনগণের মধ্যে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও সোমালিয়ার কিছু অংশও অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী বাংলার এই উত্থান বাঙালি জনগণের জন্য গর্বের বিষয়, তবে এর সঙ্গে নতুন দায়িত্বও এসেছে। ভারতের পরিসংখ্যান গবেষণা ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ড. নীলাদ্রিশেখর দাস উল্লেখ করেছেন যে এই রিপোর্ট শুধুমাত্র একটি ভাষাগত সাফল্য নয়, এটি দুই দেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির জন্য নতুন দায়িত্বের সূচনা করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে বাংলাভাষী নাগরিকদের সংখ্যা অনুসরণ এবং তাদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন প্রযুক্তি, শিক্ষা এবং ঔষধী শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলি এই ধরনের তথ্য ব্যবহার করে তাদের পণ্য এবং সেবাগুলি বাংলা ভাষার জনগণের জন্য উপযোগী করতে সাহায্য করে। তাই এই তথ্য শুধুমাত্র সরকারের জন্যই নয়, আন্তর্জাতিক ব্যবসা এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।
যদিও বাংলা এখন বিশ্ব মঞ্চে এক বড় স্থান অধিকার করেছে। তবে ভারতের আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে হিন্দি এখনও প্রথম স্থানে রয়েছে। এই পরিবর্তন বাংলার ক্রমবর্ধমান সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবের প্রমাণ।