‘বাংলা কোনো ভাষা নয়’ লিখে চরম বিতর্কে জড়িয়েছেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য (Bengali language controversy)। বাংলা ভাষাকে দিল্লি পুলিশের তরফে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ চিহ্নিত করেছে। এ বিষয়ে বঙ্গ বিজেপি নীরব। আর সিপিআইএমের কটাক্ষ, বিজেপি বাঙালি বিরোধী। এবার বাম ছাত্র সংগঠন SFI-এর তরফে বিজেপিকে বর্ণপরিচয় পাঠিয়ে বাংলা শিক্ষা দেওয়া হল।
উল্লেখ্য, বাংলা কোনো ভাষা নয় ও বাংলাদেশি ভাষা ইস্যুতে শাসকদল তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য জুড়ে ভাষা আন্দোলন শুরু করেছেন। সিপিআইএমের কটাক্ষ, বিধানসভা নির্বাচনের আগে দুর্নীতির ইস্যু ভুলিয়ে বাঙালি আবেগ তৈরি করার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। আরও অভিযোগ, তিনি বিজেপির রাজনৈতিক নীতি নির্ধারক সংঘ পরিবার পরিচালিত চরম বিদ্বেষমূলক বিদ্যালয়গুলিকে রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে দিতে কৌশলে সরকারি বিদ্যালয়ের করুন অবস্থা তৈরি করেছেন।
দলনেত্রী সরব হলেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বাংলা ভাষা বিতর্কে প্রায় ভ্যানিশ। আর বাম ছাত্র সংগঠন SFI জানিয়েছে,বাংলা ভাষার বুনিয়াদি শিক্ষা দিতে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে ‘সহজপাঠ’ এবং ‘বর্ণপরিচয়’ পাঠানোর সিদ্ধান্ত। বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে সেই কুরিয়ার পত্র বা খাম তৈরি করে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে।
এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে বলেন, বিজেপি গোটা দেশজুড়ে বাংলা ভাষার প্রতি ঘৃণার পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। বাংলা ভাষাভাষী গরীব মানুষকে মারধর করা হচ্ছে। জেসিপি করে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে আবার দিল্লি পুলিস ‘বাংলা ভাষা’ বলে কিছু নেই বলেই বলছে। সেটাই আবার বিজেপি নেতা অমিত ম্যালব্য বলছেন। এর থেকে স্পষ্ট বিজেপির বাংলার ভাষা, বাংলার সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। তাই, বাংলা ভাষা কি, কেন সে সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা তৈরি করতে, বুনিয়াদি শিক্ষা দিতে রাজ্য বিজেপি দফতরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা সহজ পাঠের প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত বর্ণ পরিচয় আমরা পাঠাব।
কেন এই বই দুটি পাঠানো হচ্ছে সে বিষয়ে দেবাঞ্জন বলেন, একই সঙ্গে আমরা একটা বার্তাও পাঠাচ্ছি। তা হলো… পড়ুন, পড়ান, জানুন বাংলা ভাষা কী? জানুন, আরএসএস মানে আপনাদের পূর্বপুরুষরা যখন দেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছিল, তখন দেশের বড় সংখ্যক ব্রিটিশ খ্যাদানো বিপ্লবীরা এই ভাষায় কথা বলতেন। ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা তারা সকলেই এই ভাষাতেই কথা বলতেন।
শাসকদল তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমালোচনা করে দেবাঞ্জন বলেন, বাংলার ভাষার প্রতি বিজেপির তৈরি ঘৃণাতে ঘি ঢালছেন রাজ্য সরকার। কীএকটা ভাষা আন্দোলন না কী করবে বলছেন। কারা ভাষা আন্দোলন করবে? যারা গত দেড় দশক ধরে এই রাজ্যে ভাষা সন্ত্রাস চালিয়েছে? অনুব্রত মণ্ডল মদন মিত্রর বলা ভাষা নিয়ে আন্দোলন করবেন? শুধু তাই নয়, ওটা রাত্রিরে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে তরুণ প্রজন্মরা বাইরে গিয়ে কাজ করে। আর সেই বাংলা ভাষা পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর বিজেপি অত্যাচার চালাবে। তা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। সেই নোংরা রাজনীতির বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই। বর্ণপরিচয় সহজপাঠ পাঠানোর তারই একটি ধাপ। এরপরেও যদি তারা না বোঝে, তাদেরকে আন্দামানের টিকিট কেটে পাঠিয়ে দেওয়া হবে সেলুলার জেলে। সেখানে গিয়ে দেখে আসবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বাংলাভাষীদের অবদান কি ছিল।