বঙ্গে ভারী বর্ষণ, কপালে চিন্তার ভাঁজ মৃৎশিল্পীদের

হাতে মাত্র কয়েক দিন সময়, তারপরেই কালীপুজো (Kali Puja)। এই সময় মৃৎশিল্পীদের (mud artisans) জন্য এটি অত্যন্ত ব্যস্ততার সময়। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করে তা…

Kumortuli idol making

হাতে মাত্র কয়েক দিন সময়, তারপরেই কালীপুজো (Kali Puja)। এই সময় মৃৎশিল্পীদের (mud artisans) জন্য এটি অত্যন্ত ব্যস্ততার সময়। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করে তা সময়মতো মণ্ডপে পৌঁছে দেওয়া, পাশাপাশি আলোর উৎসবের জন্য মাটির প্রদীপ তৈরি—সবকিছু মিলিয়ে কাজের চাপ বেড়ে যায়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। ‘দানা’-র প্রভাবে অবিরাম ভারী বৃষ্টি এখন শিল্পীদের এক নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে।

বৃষ্টি যে শুধু কষ্ট দিচ্ছে, তা নয়। বরং, এই বৃষ্টির জন্য মাটির প্রদীপ তৈরি করাও হয়ে দাঁড়িয়েছে বেশ কঠিন। মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, বর্ষার কারণে মাটিতে অনেক বেশি জল জমে যাচ্ছে, যা মাটি শুকানোর প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রদীপ তৈরি করে, তাতে রং করার জন্য এবং শুকানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নেই। ফলে, তাদের কাজের গতি কমে যাচ্ছে।

   

শিল্পীরা বলছেন, “আমাদের হাতে খুব অল্প সময়।কালীপুজোতে মাটির প্রদীপের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এবারের এই বৃষ্টির কারণে প্রদীপ তৈরির কাজ যথাযথভাবে হচ্ছে না। আমরা উদ্বিগ্ন, কীভাবে সময়মতো সব কিছু প্রস্তুত করব।” এই সংকটের কারণে, তাদের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। যদি তারা সময়মতো কাজ সম্পন্ন করতে না পারেন, তবে তাদের ব্যবসা হুমকির মুখে পড়বে।

মৃৎশিল্পীদের সমস্যা শুধু প্রদীপ তৈরি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। বর্ষার কারণে তাদের প্রতিমা তৈরির কাজে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তারা জানাচ্ছেন, প্রতিমার মাটির গুণগত মান বজায় রাখতে বর্ষার সময় আলাদা যত্ন নিতে হয়। অতিরিক্ত জল মাটির গুণমানকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই, এই বৃষ্টির কারণে তাদের কাজের চাপ অনেক বেড়ে গেছে।

শিল্পীরা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রদীপ এবং প্রতিমা তৈরি করেন। কিন্তু এবারের অবস্থা তাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তারা জানান, “আমরা চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ শেষ করার, কিন্তু আবহাওয়া আমাদের হাতে নেই। যদি এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকে, তাহলে আমাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে।”

এদিকে, সরকারি এবং স্থানীয় সংস্থাগুলোও শিল্পীদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে। তারা মৃৎশিল্পীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে, যাতে করে এই কঠিন পরিস্থিতিতে তারা কিছুটা সুবিধা পায়। কিন্তু শিল্পীরা আশঙ্কা করছেন, এসব ব্যবস্থা যথেষ্ট হবে কিনা।

মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, মাটির প্রদীপের চাহিদা বছরে এই সময়ে সবচেয়ে বেশি থাকে। সুন্দর মাটির প্রদীপ কিনতে উৎসাহী হন অনেকে। তবে বৃষ্টির কারণে যদি তারা এই প্রদীপ তৈরির কাজ বজায় রাখতে না পারেন, তাহলে তা তাদের ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

শহরের এক মৃৎশিল্পী জানান, তাদের কাজ শুধু প্রতিমা তৈরি করা নয়, বরং তারা ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে বহন করছেন যা যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে। তাদের কাজের মাধ্যমে, তারা ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভক্তি জানানোর একটি বিশেষ পন্থা অবলম্বন করছেন। তাই, তারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন, সংকটের মধ্যেও যদি প্রতিভা এবং শ্রমের একত্রিত শক্তি থাকে, তবে সব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা সম্ভব।