বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারী কর্মীদের ডিএ (DA) (মহার্ঘভাতা) সংক্রান্ত একটি গুরুতর বিষয় ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারাধীন। এই মামলার মূল কেন্দ্রে রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারী কর্মীদের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের সমতুল্য হারে ডিএ(DA) দেওয়া উচিত কি না। এই বিতর্কের মধ্যেই নতুন করে সামনে এসেছে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি—একই রাজ্যের কর্মচারীদের মধ্যেই ডিএ হারে রয়েছে বিভাজন।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারীদের দুটি ভাগে ভাগ করা হচ্ছে ডিএ (DA) প্রদানের ভিত্তিতে। প্রথম ভাগে রয়েছেন সেই সমস্ত কর্মচারী, যাঁদের রাজ্য সরকার অন্যান্য রাজ্যে নিয়োগ করেছে বা পাঠিয়েছে। এই কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের মতোই ডিএ পান—অর্থাৎ প্রায় ৫৫ শতাংশ হারে।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় ভাগে রয়েছেন সেই কর্মচারীরা, যাঁরা কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কাজ করছেন। তাঁদের ডিএ কেন্দ্রীয় সরকারের তুলনায় অনেক কম, মাত্র ১৮ শতাংশ হারে দেওয়া হচ্ছে। যা অনেক রাজ্য সরকারের কর্মীদের থেকেও কম। এই বৈষম্য নিয়ে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্যসভার সদস্য ও বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
একই সরকারের মধ্যে ডিএ হারে এত বড় বৈষম্য কেন?
বিভিন্ন আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একই সরকারের অধীনস্থ স্থায়ী কর্মচারীদের জন্য ডিএ হারে এত বড় পার্থক্য রাখা মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। সিনিয়র অ্যাডভোকেট কৌশিক গুপ্ত জানিয়েছেন, “মহার্ঘভাতা মূলত বেতন কাঠামোর একটি অংশ। তাই কোনোভাবেই একই প্রশাসনিক কাঠামোর অধীনে থাকা কর্মচারীদের মধ্যে আলাদা হারে ডিএ দেওয়া উচিত নয়।”
তিনি আরও বলেন, “এটা কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং নীতিগত দিক থেকেও সঠিক নয়। যদি এক কর্মচারী দিল্লিতে বসে কাজ করেন এবং আরেকজন কলকাতায় কাজ করেন, কিন্তু তাঁরা একই সরকার দ্বারা নিযুক্ত, তবে তাঁদের ডিএ হারে এত বড় ফারাক থাকার কোনও যুক্তি নেই।”
রাজ্য সরকারের যুক্তি ও আইনি চ্যালেঞ্জ
পশ্চিমবঙ্গ সরকার বরাবরই বলে এসেছে, রাজ্যের আর্থিক অবস্থার কারণেই কেন্দ্রের সমতুল্য ডিএ (DA) দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আদালতে এখন যেভাবে “এক সরকারের দুই হার” ইস্যুটি সামনে এসেছে, তা রাজ্য সরকারের জন্য বড় আইনি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিচারপতিরা যদি মনে করেন যে এই বৈষম্য সংবিধানের সমতা নীতির (Article 14) পরিপন্থী, তবে রাজ্য সরকারকে কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে বাধ্য করা হতে পারে। অর্থাৎ শুধুমাত্র দিল্লি বা অন্য রাজ্যে থাকা কর্মচারীরা নয়, পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে কাজ করা কর্মচারীরাও তখন ৫৫ শতাংশ হারে মহার্ঘভাতা পাওয়ার দাবি করতে পারবেন।
কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া
এই বিষয়ে কর্মচারী মহলে প্রচণ্ড ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই বলছেন, “একই দপ্তরে কাজ করেও কেউ যদি বেশি ডিএ পান আর কেউ কম, তা হলে সেটা স্পষ্ট বৈষম্য। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কেন্দ্রীয় হারে ডিএ, এবার সেটা বাস্তবায়িত হোক।”
এখন গোটা দৃষ্টি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিকে। এই মামলার রায় শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, বরং দেশের অন্যান্য রাজ্যেও ডিএ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। যদি আদালত এই ডিএ বৈষম্যকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে, তাহলে তা ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান ও বেতন কাঠামোয় বড়সড় পরিবর্তন আনতে পারে।