Sukanta Majumder: পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার কলকাতায় দলের কার্যালয়ে দলের ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এই উপলক্ষে তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় রাম নবমী উপলক্ষে সবার মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানান এবং সিপিএম ও তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)-এর প্রতি আবেদন জানান যে তারা রাম নবমী উৎসবে অংশগ্রহণ করুক। তিনি বলেন, “শ্রী রাম সবার, সিপিএম ও তৃণমূল কেন রাম নবমী শোভাযাত্রায় অংশ নেবে না, তাদের তো কেউ বাধা দিচ্ছে না।”
মজুমদার আরও বলেন, “শ্রী রাম কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়, তিনি ভারতবর্ষের হৃদয় ও আত্মা।” তিনি একযোগে রাম নবমী উদযাপনকে রাজনৈতিক বিতর্কের বাইরে রেখে আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্ব দেন। বিজেপির এই নেতা এও উল্লেখ করেন যে রাম নবমী মানুষের মধ্যে শান্তি, ঐক্য এবং ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছানোর এক বিরল সুযোগ।
উল্লেখযোগ্যভাবে, বিজেপি এই দিনটি তার ৩৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হিসেবে উদযাপন করছে। ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিজেপি বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত এবং গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে এটি প্রথম স্থান অধিকার করেছে। দলটি ১৯৫১ সালে ভারতীয় জনসংঘ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরবর্তীতে নেতাদের মতো আতল বিহারী বাজপেয়ী এবং এল কে আডবাণী নেতৃত্বে রাজনৈতিক মহলে গুরুত্ব লাভ করে।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রাম নবমী উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা জানান এবং শান্তি, সমৃদ্ধি ও সকলের উন্নতির মূল্যবোধ বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি এক্স (প্রতিষ্ঠিত টুইটার) এ পোস্ট করেন, “রাম নবমী উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা। সকলকে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সকলের উন্নতির মূল্যবোধ রক্ষা করার আবেদন জানাই। আমি কামনা করি রাম নবমী উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হোক।” এর পাশাপাশি, শোভাযাত্রার আয়োজন এবং নিরাপত্তার বিষয়েও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের হাওড়াতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে, কারণ বিপুল সংখ্যক ভক্তরা রাম নবমী উপলক্ষে মন্দিরে আসছেন। হাওড়া, চুঁচুড়া এবং রাজ্যটির বিভিন্ন জায়গায় এই দিনটি উদযাপনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। একই সময়, বিজেপি নেতা দিলিপ ঘোষ রাম নবমী উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে রাজ্যজুড়ে এই উৎসব ধুমধামভাবে পালিত হবে। তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হতে সহায়তা করার জন্য আহ্বান জানান।
বিজেপি নেতা আরও বলেন, “হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে উৎসবটি উদযাপন করবে, এবং তাদের উৎসবে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া উচিত নয়।” তার ভাষায়, রাম নবমী মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ এবং এটি পালনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।
পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামে রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানও হবে। এই অনুষ্ঠানটি রাম নবমী উপলক্ষে হতে যাচ্ছে এবং রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির নেতাদের মধ্যে অন্যতম, শুভেন্দু অধিকারী, এই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এই উপলক্ষে রাজ্যজুড়ে প্রস্তুতি চলছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হয়েছে।
এদিকে, আজকের দিনটি শুধু রাম নবমীই নয়, এটি পশ্চিমবঙ্গে শারদীয় দুর্গোৎসবের নবম দিনও। মা সিদ্ধিদাত্রীকে পূজা করা হয় এই দিন। সিদ্ধিদাত্রী মা দুর্গার নবম রূপ এবং তাকে পূজা করার মাধ্যমে ভক্তরা শক্তি, সমৃদ্ধি এবং বাধাবিঘ্ন দূর করার আশীর্বাদ লাভ করেন। এই দিনটি নবরাত্রির শেষ দিন এবং বাংলার ধর্মীয় জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
রাম নবমী হল একটি ধর্মীয় উৎসব, যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র। এই দিনে রামচন্দ্রের জন্ম উৎসব পালিত হয়, যিনি ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক চরিত্র। আর তাই, ভারতজুড়ে এই দিনটি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার গুরুত্ব রয়েছে, যেমন পশ্চিমবঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিতর্কের মধ্যেও, রাম নবমী উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো ধর্মীয় ঐক্য, শান্তি এবং মানবতার মূল্যবোধ প্রচার করা। এই দিনটি সকলের জন্য শুভ এবং আনন্দময় হয়ে উঠুক, এই কামনা প্রকাশ করেছে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং ধর্মীয় নেতারা।
রাম নবমী শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। এই দিনটি হিন্দু ধর্মের রীতি অনুসারে উদযাপন করা হলেও, এর আধ্যাত্মিক বার্তা সবার জন্য। রাজনৈতিক বিতর্কের মাঝে এটি আমাদের ধর্মীয় ঐক্য ও শান্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়।