শিয়ালদহ স্টেশন এলাকায় শনিবার বিকেলে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করছিলেন এক তরুণী (Bangladeshi Woman)। এনআরএস হাসপাতালের সামনে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা তাঁকে দেখে সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যান। সেখানে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তরুণীটি নিজেকে বাংলাদেশি নাগরিক বলে পরিচয় দেন। তাঁর নাম বেবি বিশ্বাস (২০), পিতা আলমগীর খান, বাড়ি বরিশালের নাচনাপাড়া মল্লিকখালি গ্রামে, পাথরঘাটা থানা এলাকায়।
সীমান্ত পেরোনোর গল্প
জিজ্ঞাসাবাদে বেবি জানান, তিন দিন আগে বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে প্রবেশ করেন। তবে তাঁর কাছে কোনো বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা ছিল না। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসে কাজের সন্ধানে মুম্বই পৌঁছানোর পরিকল্পনা ছিল তাঁর। সীমান্ত পেরিয়ে প্রথমে বসিরহাটে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন এবং পরে মুম্বইয়ের উদ্দেশে ট্রেনে ওঠেন।
মুম্বই থেকে ফের কলকাতা
মুম্বইয়ে পৌঁছানোর পর কাজের সন্ধানে ঘোরাফেরা করলেও কোনো উপার্জনের ব্যবস্থা করতে পারেননি। এরই মধ্যে পুলিশি তৎপরতার ভয়ে তিনি আবার ট্রেনে চেপে কলকাতায় ফিরে আসেন। কিন্তু কলকাতায় এসে কোনো ঠিকানা না থাকায় শিয়ালদহ স্টেশন চত্বর এবং এনআরএস হাসপাতালের সামনে ঘুরতে থাকেন।
পুলিশি তদন্তে ধরা পড়লেন
শনিবার বিকেলে এনআরএস আউটপোস্টের পুলিশ কর্মীদের নজরে পড়েন তিনি। সন্দেহজনক আচরণ দেখে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি নিজের বাংলাদেশি পরিচয় এবং অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করেন। তাঁর কাছ থেকে কোনো বৈধ নথি বা পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি।
থানায় মামলা দায়ের
এন্টালি থানায় এই বিষয়ে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। বেবির বিরুদ্ধে ভারতীয় বিদেশি আইন, ১৯৪৬-এর ধারা ১৪ অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও উদ্বেগজনক।
চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে জেরা পর্বে
বেবি বিশ্বাসের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কাজের অভাবে এবং আর্থিক সমস্যার কারণে তিনি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। মুম্বইয়ে গিয়ে কাজের ব্যবস্থা করতে পারেননি বলেই কলকাতায় ফেরেন। তবে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁর কিছু বিবৃতি পরস্পরবিরোধী বলে মনে হয়েছে, যার জন্য তদন্তে আরও সময় লাগবে।
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের পরিসংখ্যান বাড়ছে
সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে কাজের খোঁজে বা আর্থিক সমস্যার কারণে সীমান্ত পেরিয়ে আসার প্রবণতা বেড়েছে। এমন ঘটনা রাজ্যের পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে বাড়তি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আদালতে পেশ ও ভবিষ্যৎ ব্যবস্থা
রবিবার বেবি বিশ্বাসকে আদালতে পেশ করা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁকে কাস্টডিতে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। একই সঙ্গে সীমান্তে কীভাবে তিনি পেরিয়ে এলেন এবং এতে কোনো চক্র জড়িত রয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হবে।
এই ঘটনা শুধু আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয়, বরং বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে কাজের সুযোগের অভাব এবং দারিদ্র্যের মতো সামাজিক সমস্যার গভীর সম্পর্ক তুলে ধরে। তবে ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে মোকাবিলা করা প্রয়োজন।