ভারতীয় বাঙালিদের জাতীয় সংগঠন ‘বাংলাপক্ষ’ (Bangla Pokkho) বাংলাদেশের বাঙালিদের ‘অসভ্য’ আখ্যা দেওয়ায় নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায় (Garga Chatterjee) শনিবার ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেছেন, “বাংলাপক্ষ পূর্ববঙ্গকে অসভ্য বাংলা বলে। নারী-পুরুষের সমান অধিকারের বিরুদ্ধে যেথায় লাখো মৌলবাদী জমা হয়, এক ধর্ষিতার কুশপুতুলকে বিবস্ত্র করে জুতো মারে, তা অসভ্য বাংলাই।”
গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে, এবং দুই বাংলার নেটিজেনদের মধ্যে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। বাংলাদেশি নাগরিক মোহাম্মদ আজ মন্তব্য করে লেখেন, “তোদের দেশে তো পতিতাবৃত্তি শ্রমের মধ্যে গণ্য করা হয়। তাহলে তোরা কেন সভ্যতার দোহাই দিস?”
উক্ত মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এক ভারতীয় নারী পাল্টা জবাবে লেখেন, “পতিতাবৃত্তি কোনো ক্রাইম নয়। ধর্ষণ ক্রাইম। নারী যদি নিজের শরীর নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সেটা সভ্যতারই পরিচয়।”
বাংলাদেশের অনেক সামাজিক ও মানবাধিকার কর্মী এই মন্তব্যকে ‘জাতিগত বিদ্বেষ’ ও ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতা’র বহিঃপ্রকাশ বলে আখ্যা দেন। মানবাধিকারকর্মী ও লেখক লীনা হক বলেন, “এধরনের উক্তি শুধু ঘৃণা ছড়ায়, কোনো গঠনমূলক আলোচনা নয়। দুই বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সংকট আলাদা হলেও, মানুষকে ‘অসভ্য’ বলার কোনো অধিকার কারও নেই।”
গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থকরাও একে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলে ব্যাখ্যা করছেন। ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট সেকশনে এক ভারতীয় মন্তব্য করেন, “কিছু মানুষ, বা অনেক হলেও, যদি অসভ্য হয়, তার জন্য বাংলাদেশ বা ভারত খারাপ হতে পারে না। সামগ্রিক জাতিকে এক কাতারে ফেলা যুক্তিহীন।”
বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আলোচনায় উঠে আসে, এটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তি বা সংগঠনের বক্তব্য নয়, বরং একপ্রকার ‘মেরুকরণ’ এবং দ্বিধা সৃষ্টি করার চেষ্টা। কিছু নেটিজেন বলেন, “ভারতের কিছু অংশে বাংলা ভাষাভাষীদের ‘বাংলাদেশি’ বলে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করা হয়, সেটাই এর উৎস। এটি দুই বাংলার মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করার কৌশল।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই দেখা গেছে, অনেক ভারতীয়ও গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। একজন মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশের সমাজে যেমন সমস্যা আছে, তেমনি ভারতেরও কম নয়। বরং একে অপরকে শিক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে আমাদের উচিত সমঝোতার মাধ্যমে আলোচনা করা।”