এসএসসি দুর্নীতি মামলায় চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা ফের সরব। কলকাতার বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের লাঠিচার্জ ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই ঘটনার পর তৃণমূল সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করল বাঙালি অধিকারমুখী সংগঠন ‘বাংলাপক্ষ’ (Bangla Pokkho)। সংগঠনের মুখপাত্র গর্গ চট্টোপাধ্যায় ফেসবুকে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে কড়া সুরে সতর্কবার্তা দেন।
শুক্রবার নিজের ফেসবুক পোস্টে গর্গ লেখেন, “এসএসসি দুর্নীতিতে যোগ্য বাঙালি শিক্ষকদের জীবনে যে অনিশ্চয়তা এসেছে, তাদের সব প্রতিবাদে বাংলা পক্ষ পাশে আছে। পুলিশের লাঠিচার্জ চরম অমানবিক।” তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট যে, আন্দোলনকারী শিক্ষকদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিয়ে বাংলাপক্ষ তাদের দাবি-দাওয়ার পাশে দাঁড়াচ্ছে। এরই পাশাপাশি পুলিশের হস্তক্ষেপ ও লাঠিচার্জকে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের উদাহরণ বলেই ব্যাখ্যা করেন তিনি।
একই সুর শোনা যায় বাংলাপক্ষের আরেক মুখ কৌশিক মাইতির বক্তব্যে। তাঁর কথায়, “এভাবে শিক্ষক পেটানো ঐতিহাসিক ভুল। ক্ষমতার দম্ভে বামেরাও অনেক ভুল কাজকে ঠিক মনে করতো। ভোটে জিতে যাবো, এই অহংকার থেকে তৃণমূল মারাত্মক ভুল করছে। ইতিহাস ক্ষমা করে না।”
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার চাকরিচ্যুত এসএসসি শিক্ষকরা বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন। পুলিশ যখন বিক্ষোভ তুলতে যায়, তখন ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেলে পুলিশ লাঠি চালায়। এই ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। এর আগেও কসবায় আন্দোলনের সময় পুলিশের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন শিক্ষকরা। তখনও অভিযোগ উঠেছিল, শিক্ষকদের উপর লাথি-ঘুষির মতো অমানবিক আচরণ করেছিল পুলিশ। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
গত বছর কলকাতা হাইকোর্ট এক ধাক্কায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিল করে দেয়। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টও হাইকোর্টের সেই রায় বহাল রাখে। এর পর থেকেই বঞ্চিত শিক্ষকরা নানা সময়ে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায় আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবর্তন সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজে চেষ্টা করছেন এই সমস্যা মেটানোর জন্য। শিক্ষকরা আন্দোলন না করে, ছাত্রছাত্রীদের পড়ান। যারা তাদের ভুল পথে চালাচ্ছেন, তারাই শিক্ষকদের ক্ষতি করছেন।”
তবে ফিরহাদের এই বক্তব্য ঘিরেও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, আন্দোলনকারীদের প্রতি সরকারের এই উপদেশ কী গণতন্ত্রের স্বরূপ? ফিরহাদ বলেন, “মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারছে না, ছাদ থেকে লাফ দিয়ে বেরোতে হচ্ছে ওষুধ আনতে। এটা কি আদৌ আন্দোলন?” যদিও আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, তাঁরা বিকল্প রাস্তা ছেড়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ছিলেন, পুলিশ অকারণেই বলপ্রয়োগ করেছে।
বাংলাপক্ষের এই প্রতিক্রিয়া এবং আন্দোলনের প্রতি তাঁদের সমর্থন নতুন মাত্রা যোগ করছে রাজ্য রাজনীতিতে। ২০২৬-এর নির্বাচনের আগে শিক্ষক, চাকরি ও দুর্নীতিকে ঘিরে যে সামাজিক অসন্তোষ বাড়ছে, তা তৃণমূলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাপক্ষের হুঁশিয়ারি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আগামী দিনে এই আন্দোলন বৃহত্তর বাঙালি স্বার্থের প্রশ্নে পরিণত হতে পারে। তৃণমূল যদি এই অসন্তোষকে গুরুত্ব না দেয়, তাহলে তার রাজনৈতিক মাশুল দিতে হতে পারে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।