WBCS-এ বাংলা ফিরিয়ে আনতে কলকাতায় রাজপথে বৃষ্টিতে ভিজল হাজারো বাঙালি

ভরা বর্ষার মধ্যেও কলকাতার রাজপথে জনজোয়ার। হাজার হাজার বাঙালি একুশে উদ্যান থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত বাংলা পক্ষর (Bangla Pokkho) মহামিছিলে অংশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস…

Bangla Pokkho movement: Massive Protest Rally in Rain-Soaked Kolkata Opposes Cancellation of Mandatory Bengali in WBCS, Demands Reinstatement

ভরা বর্ষার মধ্যেও কলকাতার রাজপথে জনজোয়ার। হাজার হাজার বাঙালি একুশে উদ্যান থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত বাংলা পক্ষর (Bangla Pokkho) মহামিছিলে অংশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস (WBCS) পরীক্ষায় বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত বাতিলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই প্রতিবাদ মিছিলে স্লোগান উঠেছে— “হিন্দি-উর্দু চলবে না, বাংলা বাধ্যতামূলক চাই!” বাংলা পক্ষর এই আন্দোলন রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে “বাঙালি বিরোধী” এবং “হিন্দি-উর্দু লবির কাছে আত্মসমর্পণ” হিসেবে অভিহিত করেছে।

বাংলা পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে WBCS পরীক্ষায় বাংলা ভাষাকে বাধ্যতামূলক করার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে রাজ্য সরকার কিছুকাল আগে ৩০০ নম্বরের বাংলা ভাষার পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দার্জিলিংয়ের জন্য নেপালি ভাষার বিকল্প রাখা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তকে বাংলার শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সমর্থন করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জমা দেওয়া একটি ডেপুটেশনে এই বিশিষ্টজনেরা স্বাক্ষর করেছিলেন। রাজ্য সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই দাবি স্বীকৃতি পায় এবং বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক করার গেজেট নোটিফিকেশন প্রকাশিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (WBPSC) নতুন সিলেবাসে পরীক্ষার বিষয়ে নোটিফিকেশন জারি করে। এই সিদ্ধান্তে WBCS পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহের জোয়ার দেখা গিয়েছিল।

   

কিন্তু সম্প্রতি, হঠাৎ এক নোটিশে রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে। নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, আগের মতোই হিন্দি ও উর্দু ভাষায়ও WBCS পরীক্ষা দেওয়া যাবে। এই সিদ্ধান্তকে বাংলা পক্ষ “হিন্দি-উর্দু লবির চাপে আত্মসমর্পণ” এবং “বাঙালির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা” হিসেবে অভিহিত করেছে। বাংলা পক্ষর সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাংলা ভারতের বাইরে নয়। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে যেমন বিহারে হিন্দি, উত্তরপ্রদেশে হিন্দি, মহারাষ্ট্রে মারাঠি বাধ্যতামূলক, তেমনি বাংলায় বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, বাংলা না জেনেও WBCS অফিসার হওয়া সম্ভব। এটা লজ্জাজনক। শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে হিন্দি-উর্দু লবি ঐক্যবদ্ধ। তাদের চাপে বাঙালির ভোটে নির্বাচিত সরকার নতি স্বীকার করছে। আমরা স্পষ্ট বলছি—২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে বাংলা বাধ্যতামূলক করতে হবে।”

বৃষ্টির মধ্যেও এই মিছিলে অংশ নেওয়া হাজার হাজার মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে মহিলা ও ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা হিন্দি-উর্দু বাতিল করে বাংলা ভাষা পুনর্বহালের দাবিতে স্লোগান দিয়েছেন। “জয় বাংলা”, “বাংলা চাই, হিন্দি-উর্দু নয়” ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে কলকাতার রাজপথ। মিছিলটি বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের কাছাকাছি একুশে উদ্যান থেকে শুরু হয়ে হাজরা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিল শেষে হাজরা মোড়ে একটি জনসভায় গর্গ চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও বাংলা পক্ষর শীর্ষ পরিষদ সদস্যরা বক্তব্য রাখেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কৌশিক মাইতি, রজত ভট্টাচার্য, অরিন্দম চ্যাটার্জী, সম্রাট কর, মনন মণ্ডল, মহ সাহিন, আব্দুল লতিফ, সৌম্য কান্তি ঘোড়ই, মনোজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেন এবং বাংলা ভাষার প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

Advertisements

এই আন্দোলন শুধু কলকাতায় সীমাবদ্ধ নয়। জলপাইগুড়ি, কল্যাণী, শ্যামনগর সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বাংলা পক্ষর প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে। সংগঠনের সদস্যরা পোস্টারিং, সভা ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের মাধ্যমে জনমত গঠন করছে। তারা দাবি করছে, বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক না করা হলে বাঙালির সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পরিচয় বিপন্ন হবে।

বাংলা পক্ষর এই আন্দোলন রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই ইস্যু আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলা পক্ষর নেতৃত্ব স্পষ্ট করেছে যে, তারা এই আন্দোলন অব্যাহত রাখবে যতক্ষণ না বাংলা ভাষা WBCS পরীক্ষায় পুনরায় বাধ্যতামূলক করা হয়।

বাংলা পক্ষর এই মহামিছিল কলকাতার রাজপথে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে। বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অঙ্গীকার এবং রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ স্পষ্ট হয়েছে। এই আন্দোলন কেবল ভাষার প্রশ্ন নয়, এটি বাঙালির পরিচয় ও অধিকারের লড়াই। বৃষ্টির মধ্যেও হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে, বাংলা ভাষার প্রতি তাদের ভালোবাসা অটুট।