স্কুল-কলেজে সরস্বতী পুজো নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি বাংলাপক্ষর

শিক্ষাঙ্গনে সরস্বতী পুজো বন্ধ (Saraswati Puja Controversy) করা নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। তবে এবার এই বিতর্ককে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার…

Bangla Pokkho Issues Strong Warning Against Stopping Saraswati Puja

short-samachar

শিক্ষাঙ্গনে সরস্বতী পুজো বন্ধ (Saraswati Puja Controversy) করা নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। তবে এবার এই বিতর্ককে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার একাধিক কলেজ ও নদিয়ার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজো করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে চিত্তরঞ্জন কলেজে সরস্বতী পুজো বন্ধ করার ঘটনাকে ঘিরে, যেখানে তৃণমূল বিধায়ক বিবেক গুপ্তার নাম জড়িয়েছে।

   

এই সমস্ত ঘটনায় বাংলাপক্ষ কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “বাংলার কোথাও কোন স্কুল ও কলেজে সরস্বতী পুজো বন্ধ করা যাবে না। যদি কোথাও এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে বাংলাপক্ষকে জানান। আমরা সেখানে পুজো করাবো। সরস্বতী পুজোয় সমস্যা যার, বাংলার বাইরে জায়গা তার।”

চিত্তরঞ্জন কলেজে সরস্বতী পুজোয় বাধা, উঠল তৃণমূল বিধায়কের নাম
অভিযোগ, কলকাতার চিত্তরঞ্জন কলেজে সরস্বতী পুজো আয়োজনের চেষ্টা করা হলে বিধায়ক বিবেক গুপ্তা তাতে বাধা দেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, বিধায়ক টাকা আটকে রেখেছেন। তবে ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বাংলাপক্ষ। সংগঠনের বক্তব্য, “একজন অবাঙালি বিধায়ক বাংলার সংস্কৃতিতে আঘাত করার চেষ্টা করছেন। এটি কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি।”

দক্ষিণ কলকাতায় আরও একাধিক কলেজে পুজোয় বাধার অভিযোগ
শুধু চিত্তরঞ্জন কলেজ নয়, দক্ষিণ কলকাতার আরও কয়েকটি কলেজেও সরস্বতী পুজো করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশ এই নিষেধাজ্ঞা চাপানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ ছাত্রদের। এই ঘটনাগুলির প্রতিবাদে আদালতের দ্বারস্থ হন শিক্ষার্থীরা।

হাইকোর্টের নির্দেশ: পুলিশি পাহারায় হবে সরস্বতী পুজো
এই বিতর্ক আদালত পর্যন্ত গড়ায়, এবং কলকাতা হাইকোর্ট কড়া নির্দেশ দেয়। আদালতের রায় অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পুজোয় বাধা দেওয়া যাবে না। বরং যাতে নির্বিঘ্নে পুজো হয়, তার জন্য পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। আদালতের এই নির্দেশের পর কলকাতার বিতর্কিত কলেজগুলিতে শেষ পর্যন্ত সরস্বতী পুজোর আয়োজন করা হয়েছে।

নদিয়ার প্রাইমারি স্কুলে প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা
কলকাতার পাশাপাশি নদিয়ার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজোর আয়োজন ঘিরেও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। অভিযোগ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক সরস্বতী পুজোর উদ্যোগ নিলে স্থানীয়দের একাংশ তার উপর চড়াও হন। তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগও উঠেছে।

নদিয়া ও দক্ষিণ কলকাতার ঘটনায় চুপ ছিল বাংলাপক্ষ?
যদিও চিত্তরঞ্জন কলেজের ঘটনায় সরব হয়েছে বাংলাপক্ষ, তবে নদিয়া ও দক্ষিণ কলকাতার অন্যান্য ঘটনার ক্ষেত্রে সংগঠনটি প্রথমদিকে নীরব ছিল। প্রশ্ন উঠছে, কেন বাংলাপক্ষ চিত্তরঞ্জন কলেজের ঘটনায় সরব হলেও অন্যান্য ঘটনায় সক্রিয় ভূমিকা নেয়নি?

বিশ্লেষকদের মতে, চিত্তরঞ্জন কলেজের ঘটনায় অবাঙালি বিধায়কের নাম জড়ানোয় বাংলাপক্ষ সরব হয়েছে। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে যেখানে মূলত স্থানীয় বাঙালিরাই পুজোয় বাধা দিয়েছেন, সেখানে সংগঠনটি বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেয়নি।

বাংলাপক্ষের হুঁশিয়ারি ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি
বাংলাপক্ষের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ভবিষ্যতে যদি কোথাও সরস্বতী পুজো বন্ধ করার চেষ্টা হয়, তবে সংগঠন সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে। সংগঠনের নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “বাংলার সংস্কৃতির উপর আঘাত আমরা কিছুতেই সহ্য করবো না। যেখানে পুজো বন্ধ করার চেষ্টা হবে, আমরা সেখানে গিয়ে নিজের হাতে পুজোর আয়োজন করবো।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
সরস্বতী পুজো বিতর্কে রাজনৈতিক মহলও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিজেপি এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে। দলের এক নেতার বক্তব্য, “তৃণমূলের মদতে বাংলার সংস্কৃতির উপর বারবার আঘাত আসছে। সরস্বতী পুজো বন্ধের চেষ্টা তারই প্রমাণ।”

অন্যদিকে, তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, “এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বিধায়ক বিবেক গুপ্তা বা অন্য কোন নেতার বিরুদ্ধে এমন কোন নির্দেশ দেওয়ার প্রমাণ নেই।”

সরস্বতী পুজো বন্ধের বিরুদ্ধে আদালতের হস্তক্ষেপ এবং বাংলাপক্ষের হুঁশিয়ারির পর এই বিতর্ক কতদূর গড়ায়, সেটাই এখন দেখার। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পুজো নিয়ে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক টানাপোড়েন চলছে, তা সহজে মিটবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।