কলকাতা হাইকোর্টে ফের একবার পিছিয়ে গেল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) জামিন মামলা। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০২২ সালের জুলাই মাসে গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী প্রায় তিন বছর ধরে জেলবন্দি রয়েছেন। দীর্ঘ কারাবাসের পর সম্প্রতি সিবিআইয়ের একটি মামলায় জামিন চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। বুধবার বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের এজলাসে মামলার শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও, তা এদিন স্থগিত হয়ে যায় সিবিআইয়ের সময় প্রার্থনার কারণে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, শুনানির শুরুতেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল এদিন আদালতে উপস্থিত থাকতে না পারায়, সিবিআই মামলার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুতি নিতে অতিরিক্ত সময় চান। বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ সেই আবেদন মঞ্জুর করেন এবং নতুন করে আগামী ১ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন। ফলে আপাতত আরও কয়েকদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন প্রক্রিয়ায়।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) নাম প্রথম থেকেই শোরগোল ফেলে দিয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে ইডি দীর্ঘ তল্লাশি চালিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের একাধিক ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি নগদ, বিপুল পরিমাণ সোনা ও নথি উদ্ধার করে। এরপরেই গ্রেফতার হন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। সেই থেকেই তিনি বিচারাধীন অবস্থায় কারাগারে রয়েছেন।
এই সময়ের মধ্যে একাধিকবার জামিনের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু প্রত্যেকবারই বিভিন্ন কারণে তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়। কখনও তদন্তের স্বার্থে, কখনও বা মামলার গুরুত্বের কারণে আদালত তাঁর মুক্তির পক্ষে সায় দেয়নি। ফলে টানা তিন বছর কারাগারের ভেতরে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
যদিও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ইডি পরিচালিত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে জামিন দেয়। সেই রায়ে তিনি কিছুটা স্বস্তি পেলেও, সিবিআইয়ের দায়ের করা মামলায় জামিন না মেলায় মুক্তি মেলেনি। ফলে এখনও তিনি জেলেই বন্দি রয়েছেন।
রাজনৈতিক মহলে এই মামলাকে ঘিরে বিতর্ক বরাবরই তীব্র। তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের একজন হিসেবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই দীর্ঘ কারাবাস বিরোধীদের হাতে বড় রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, তৃণমূল নেতৃত্ব বরাবরই দাবি করেছে যে তদন্ত প্রক্রিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিরোধী দলগুলো রাজনীতিক স্বার্থে এই মামলাকে ব্যবহার করছে।
এদিকে, আগামী ১ সেপ্টেম্বর যখন এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে, তখন কোন দিকে মোড় নেবে তা নিয়েই এখন চর্চা শুরু হয়েছে। সিবিআই কতটা প্রস্তুতি নিয়ে হাজির হয় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীরা কী যুক্তি তুলে ধরেন, তা-ই হবে মূল বিষয়। আদালত যদি সেদিন জামিন নিয়ে রায় দেয়, তবে হয়তো প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর কারাবাসের অবসান ঘটতে পারে। তবে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে যদি নতুন কোনও প্রমাণ বা তদন্তের প্রয়োজনীয়তার যুক্তি তুলে ধরা হয়, তাহলে হয়তো আবারও বিলম্ব ঘটতে পারে।
সব মিলিয়ে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন প্রসঙ্গ এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যেই রয়েছে। প্রায় তিন বছর পেরিয়েও তাঁর আইনি লড়াই শেষ হয়নি। এখন নজর আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে, যা ১ সেপ্টেম্বরই স্পষ্ট হবে।