পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে সোমবার থেকে একটি বিস্ফোরক বিবৃতি ঝড় তুলেছে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা অর্জুন সিংহ (Arjun Singh )। উত্তর ২৪ পরগণার ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংহের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাটমানি কালচার শিখেছেন সোনিয়া গান্ধীর থেকে। এই অভিযোগটি রাজনৈতিক বৃত্তে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং এর মাধ্যমে কংগ্রেস পার্টি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে স্পষ্ট একটি বৈরিতা ফুটিয়ে তুলেছে।
অর্জুন সিংহের বক্তব্য অনুসারে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাটমানি সংগ্রহের কৌশল শিখেছেন সোনিয়া গান্ধী থেকে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারতের রাজনৈতিক মহলে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি আরও জানান, একবার তিনি হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডাকে সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন, এবং সেখানে হুডা তাঁকে বলেছিলেন যে, প্রতিমাসে ৩০ তারিখের মধ্যে সোনিয়া গান্ধীকে ৫০০ কোটি রুপিয়া না পাঠালে তাঁর চাকরি যাবে। এই বিবৃতি থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, কংগ্রেস পার্টির অভ্যন্তরে কাটমানি সংগ্রহের একটি সুদৃঢ় জাল ছিল, যা সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত হত।
এই অভিযোগটি বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক চিত্র বহুবার বদলেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সমালোচকরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে, রাজ্যে কাটমানি ও দুর্নীতির অভ্যাস স্থাপিত হয়েছে, এবং এই অভিযোগটি সেই দাবির আরও একটি প্রমাণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। অর্জুন সিংহের বিবৃতি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, এই কাটমানি কালচার মূলত কংগ্রেস পার্টির থেকে উদ্ভূত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করছেন যে, এই ধরনের অভিযোগ রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিশ্বাসহীনতা বাড়াতে পারে। বিশেষ করে, যখন এই অভিযোগটি এমন একজন নেতার মুখ থেকে আসছে যিনি আগে তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন, তখন এর গুরুত্ব আরও বাড়ে। অর্জুন সিংহের এই বক্তব্য তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা যাচ্ছে, কারণ তাঁরা সবসময়ই নিজেদেরকে স্বচ্ছ ও জনকেন্দ্রিক রাজনীতির প্রতিভূ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
এই ঘটনার পটভূমিতে, কংগ্রেস পার্টিরও প্রতিক্রিয়া দিতে হয়েছে। কংগ্রেস নেতারা অভিযোগটিকে অসত্য ও মিথ্যা প্রচারের অংশ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে, এই ধরনের অভিযোগ শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য উত্থাপিত হয়েছে। তবে, এই অভিযোগের মাধ্যমে সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস পার্টির যুগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান আলোচনা আরও জোরদার হয়েছে।
অন্যদিকে, বিজেপি এই অভিযোগকে তাঁদের রাজনৈতিক অভিযানের একটি অংশ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন। তাঁরা দাবি করছেন যে, এই ধরনের কাটমানি কালচার থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্যই তাঁরা সরকারে এসেছেন। বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগটি বিজেপির জন্য একটি শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে কাজ করতে পারে।
এই সব ঘটনার মধ্যে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কীভাবে আকৃতি নেবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অর্জুন সিংহের এই বিবৃতি রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য এই অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে না, কারণ এটি তাঁদের নেতৃত্বের উপর প্রশ্ন তুলেছে।
সংক্ষেপে, অর্জুন সিংহের এই অভিযোগ রাজনৈতিক বৃত্তে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং এর মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।