সরে গেলেন কাজল, ফের অনুব্রতর উত্থান! মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বিশেষ গুরুত্ব

বীরভূমের রাজনৈতিক আবহ ফের উত্তাল। রবিবার রাঙা বিতানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফর ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা। আর সেই জল্পনার কেন্দ্রে রয়েছেন তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট…

সরে গেলেন কাজল, ফের অনুব্রতর উত্থান! মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বিশেষ গুরুত্ব

বীরভূমের রাজনৈতিক আবহ ফের উত্তাল। রবিবার রাঙা বিতানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফর ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা। আর সেই জল্পনার কেন্দ্রে রয়েছেন তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট নেতা — অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখ। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মাত্র দশ মিনিটের একান্ত সাক্ষাৎ যেন নতুন করে সাড়া ফেলে দিল জেলার রাজনৈতিক চত্বর জুড়ে। আর সেই সাক্ষাতের পরদিনই ভাইরাল হল একটি আমন্ত্রণপত্র। যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভায় আমন্ত্রিতদের তালিকায় দেখা গেল কেষ্ট মণ্ডলের নাম শীর্ষে, আর কাজল শেখকে relegated করে দেওয়া হয়েছে চতুর্থ স্থানে। স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়েই চর্চার পারদ চড়ছে বীরভূমে।

জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার ইলামবাজারে একটি প্রশাসনিক সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বেলা ১১টা নাগাদ এই সভা শুরু হওয়ার কথা। সেই সভায় একাধিক সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন তিনি। সাধারণত, এই ধরনের প্রশাসনিক সভাগুলিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতৃত্ব ও সরকারি আধিকারিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে, এবার সেই তালিকাতেই চমক। কারণ, দীর্ঘদিন যাবৎ ‘নিষ্ক্রিয়’ কেষ্ট মণ্ডল সেই তালিকায় রয়েছেন এক নম্বরে। তাঁর নামের পাশে লেখা রয়েছে, “পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় গ্রামোন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান”— এক সময় তাঁর দাপটের প্রতীক এই পদই যেন এবার নতুন করে তাঁকে ফিরিয়ে দিল আলোচনার কেন্দ্রে।

   

তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন কাজল শেখ, যিনি বর্তমানে বীরভূম জেলা তৃণমূলের অন্যতম মুখ ও সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট সক্রিয়। সেই কাজল শেখকেই ‘ডাউনগ্রেড’ করে চার নম্বরে রাখা হয়েছে দেখে অনেকেই বলছেন, কেষ্টের ঘরে ফিরতে শুরু হয়েছে রাজ্য নেতৃত্বের ইঙ্গিত।

এই পরিস্থিতিতে কেষ্ট অনুগামীরা যেন নতুন অক্সিজেন পেয়েছেন। রবিবার রাঙা বিতানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কেষ্টর ১০ মিনিটের বৈঠক, তারপর সোমবার ভাইরাল হওয়া আমন্ত্রণ তালিকা— দুই মিলিয়ে জল্পনার ডালপালা মেলছে রাজনৈতিক অন্দরে। যদিও এই দশ মিনিটের বৈঠকে কী কথা হয়েছে, সে বিষয়ে মুখ খোলেননি কেউই। কিন্তু অনুব্রতের উপস্থিতি ও গুরুত্ব ফের উঠে আসায় জেলার তৃণমূল রাজনীতিতে সমীকরণ বদলের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না পর্যবেক্ষকেরা।

Advertisements

অন্যদিকে, তালিকায় চতুর্থ নম্বরে থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কাজল শেখ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁর নীরবতাও কিন্তু অনেক কথাই বলছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এটা হয় তাঁর অভিমানের প্রকাশ, নয়তো দলের অন্দরমহলে তিনি চাপের মুখে রয়েছেন।

জেলার এক প্রবীণ তৃণমূল কর্মী বলেন, “আমরা জানি, কেষ্টদা ছিলেন আমাদের সবকিছু। কিন্তু কাজল শেখই এখন সব কিছু সামলাচ্ছেন। তালিকায় নামের অবস্থান নিয়ে এমন হঠাৎ পরিবর্তন মানে কি আবার কেষ্টর প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত?”

সব মিলিয়ে বলা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর ইলামবাজার সভার আগে থেকেই বীরভূমের তৃণমূল অন্দরমহলে এক চাপা টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। কেষ্ট অনুগামীরা যেমন উৎসাহে ভাসছেন, তেমনই কাজল শিবিরে ঘনিয়েছে অনিশ্চয়তার মেঘ। এখন দেখার, মঙ্গলবারের সভায় কার মুখে হাসি ফোটে, আর কার মুখে পড়ে গরল বিষাদের ছায়া। এক সময়ের ‘দাপুটে’ কেষ্ট কি তবে ধীরে ধীরে ফিরছেন মূল মঞ্চে? প্রশ্ন উঠতেই শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশ।