ভোকাল টনিক দিতে বঙ্গ-বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে শাহী-বৈঠক

কলকাতা: বাংলা ও বাঙালির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপমান, অত্যাচার এবং অনুপ্রবেশ ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে ক্রমশ চাপে বঙ্গ বিজেপি। একদিকে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের…

Amid Deadlock Over New Chief, BJP Set to Appoint Its First Woman President

কলকাতা: বাংলা ও বাঙালির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপমান, অত্যাচার এবং অনুপ্রবেশ ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে ক্রমশ চাপে বঙ্গ বিজেপি। একদিকে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের অবাধ অনুপ্রবেশ, অপরদিকে ভুয়ো নাগরিকদের হাতে দেদার দেশের পরিচয়পত্র, অথচ কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক (MHA) তা জানতে পারে না—এই অভিযোগে সরব রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। এমন পরিস্থিতিতে বাংলার বিজেপি নেতারা যখন একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থ, তখন সেই সমস্যার সমাধান সূত্র বের করতেই উদ্যোগী হয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)।

সোমবার দিল্লিতে বাংলার বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন অমিত শাহ। সূত্রের খবর, বাংলার সাংসদদের কাছ থেকে জানা যাবে কোথায় কোথায় ফাঁক ফোঁকর রয়েছে, যাতে সেই তথ্যের ভিত্তিতে রাজ্য রাজনীতিতে কৌশলগত অবস্থান নিতে পারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এর পাশাপাশি কেন্দ্রের মন্ত্রীদের হাতে বাংলার শাসক দলের বিরুদ্ধে পাল্টা অস্ত্র তুলে দিতেই এই মিটিং-এর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

   

তবে এই পরিস্থিতির জন্য স্বয়ং অমিত শাহকেই দায়ী করছেন বিজেপির একাংশ। দলের অভ্যন্তরে আলোচনায় উঠে এসেছে, বারবার বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি এবং বাঙালিদের পরিচিতিকে টার্গেট করে যে ঘৃণার রাজনীতি তৈরি হয়েছে, তার মূল কারিগর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী স্বয়ং। বিশেষত যখন বিজেপি নেতারা বাংলা ভাষাকে “বাংলাদেশি ভাষা” বলে অপমান করেন, তখন জনমানসে সেই প্রভাব পড়ে মারাত্মক। এমনকী দিল্লি সহ বিভিন্ন রাজ্যে দরিদ্র বাঙালিদের উপর পুলিশি জুলুমের ঘটনা—তা সে অবৈধ নাগরিক সন্দেহে হোক কিংবা বেনামি আটক—সব ক্ষেত্রেই বিজেপির মুখ পুড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য কিছু উদাহরণ তুলে ধরার চেষ্টা করলেও তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। মিডিয়া ব্যবহার করেও বাঙালির মন জয় করতে পারেনি বিজেপি। শেষপর্যন্ত কিশোর কুমার স্মরণে অনুষ্ঠান করে বাঙালির আবেগে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টাও হয়, কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তা “প্লাস্টার দেওয়ার মতন” চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।

Advertisements

অন্যদিকে, রাজ্যে নতুন স্ট্র্যাটেজি সাজিয়ে ময়দানে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল সূত্রে খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সাংসদ থেকে পঞ্চায়েত স্তরের কর্মীদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করবেন সোমবার থেকেই। আলোচনায় উঠে আসবে SIR (Statehood, Identity, Rights) ইস্যু। রাজ্যের সাংসদরা সংসদে এই ইস্যুতে তীব্র সুরে আক্রমণ করতে চলেছেন কেন্দ্রকে।

অন্যদিকে বিজেপি সাংসদরা সংসদে কীভাবে তৃণমূলের এই আক্রমণের মোকাবিলা করবেন, তা নিয়েও দিশাহীনতা দেখা যাচ্ছে। অনেক সাংসদই সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারছেন না বলেই দাবি দলীয় সূত্রের। এই পরিস্থিতিতেই শাহর “ভোকাল টনিক”ই একমাত্র ভরসা বঙ্গ বিজেপির কাছে।

শেষ কথা, বাংলার মানুষের আবেগ, সংস্কৃতি ও পরিচয় নিয়ে রাজনীতি করলে যে তা শেষ পর্যন্ত বুমেরাং হয়—তা এবার স্পষ্টভাবে বুঝে ফেলেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন ‘বাঙালি পুনঃআবিষ্কার’ অভিযানেই ঝাঁপাচ্ছে বিজেপি।