AI বদলে দিচ্ছে কলকাতার দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলের রূপ

কলকাতা: শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ও প্রযুক্তির যুগলবন্দিতে এবারের দুর্গাপুজোয় কলকাতা (Kolkata’s Durga Puja) জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন উন্মাদনা। যেখানে আগে প্রতিমা গড়ার কল্পনা শুরু হতো কারিগরের…

Pandal Incomplete, Deshapriya Park Puja Closed for Visitors on Friday

কলকাতা: শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ও প্রযুক্তির যুগলবন্দিতে এবারের দুর্গাপুজোয় কলকাতা (Kolkata’s Durga Puja) জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন উন্মাদনা। যেখানে আগে প্রতিমা গড়ার কল্পনা শুরু হতো কারিগরের তুলির আঁচড়ে, সেখানে এখন যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অসাধারণ সহায়তা। থিম, প্যান্ডেল, প্রতিমার নকশা—সব ক্ষেত্রেই এআই এখন বড় ভূমিকা নিচ্ছে।

Advertisements

প্রতি বছর শারদ উৎসবে শহর কলকাতা যেন পরিণত হয় শিল্প, সংস্কৃতি ও ভক্তির মেলবন্ধনে। দেবী দুর্গার প্রতিমা গড়ার প্রস্তুতি শুরু হয় কুমারটুলির অলিগলিতে মাস কয়েক আগে থেকেই। খড়, কাদা, বাঁশ ও রঙের ছোঁয়ায় গড়ে ওঠে দেবীর শক্তির প্রতিমূর্তি। কিন্তু এ বছর সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি।

   

৭০ বছর বয়সী অভিজ্ঞ মৃৎশিল্পী মন্তি পাল বলেন, “এখন আর শুধু মুখের কথায় বা হাতে আঁকা নকশার উপর নির্ভর করতে হয় না। পুজো কমিটিগুলি এআই অ্যাপ ব্যবহার করে আমাদের ছবি দেখায়। আমরা সেই অনুযায়ী প্রতিমার রূপ তৈরি করি।”

Also Read |   স্বাস্থ্যকর খাওয়ার পথে নতুন পদক্ষেপ, জোমাটো আনল ‘হেলদি মোড’

শুধু প্রতিমা নয়, এআই ব্যবহার হচ্ছে প্যান্ডেল ডিজাইন ও থিম তৈরিতেও। অনেক কমিটি এবার ChatGPT ও অন্যান্য ইমেজ জেনারেটর টুল ব্যবহার করে প্যান্ডেল সাজানোর নতুন ধারণা নিয়েছে। এর ফলে দর্শনার্থীরা পাচ্ছেন একেবারে ভবিষ্যতের ছোঁয়া।

উত্তর কলকাতার শতবর্ষী একটি পুজো কমিটির সম্পাদক সুবল পাল জানান, “আমরা এ বছর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেই থিম হিসেবে নিয়েছি। ChatGPT ও এআই টুল ব্যবহার করে প্যান্ডেল ও প্রতিমার নকশা তৈরি করেছি। থিমে থাকছে বিশাল কীবোর্ড, ঝলমলে আলো এবং দুই রোবট প্রহরী।”

ভারতে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯০০ মিলিয়ন। গুগলের ইমেজ জেনারেশন মডেলের সর্বাধিক ব্যবহারকারী এখন ভারত, আর ChatGPT-র ক্ষেত্রেও ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার। এআই-র এই সহজলভ্যতাই দুর্গাপুজোর মতো ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে আরও আধুনিক ও সৃজনশীল করে তুলছে।

তবে প্রযুক্তির এই আগমন নিয়ে মতভেদও রয়েছে। কেউ মনে করেন এটি পুজোর শিল্পকে আরও উন্নত করছে, আবার কেউ আশঙ্কা করছেন কারিগরদের ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে পারে। সুবল পাল বলেন, “পুরনো ধারা বদলাচ্ছে। এটা আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ, সেটা সময়ই বলবে।”

Also Read |   জুবিনকে শ্রদ্ধা জানাতে কাহিলিপাড়ায় গুজরাতি শিল্পপতি

সংস্কৃত গবেষক অজয় ভট্টাচার্যর মতে, “দুর্গাপুজো আমাদের সংস্কৃতির এক মহোৎসব। প্রযুক্তির সঙ্গে এর মেলবন্ধন উৎসবকে আরও আধুনিক ও বিশ্বমানের করে তুলছে। এটি ঐতিহ্য, শিল্প ও বিজ্ঞান—তিনেরই মিলন।”

আসলে দুর্গাপুজো সবসময়ই ছিল সমাজের পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি। আজ প্রযুক্তি যখন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জায়গা করে নিয়েছে, তখন উৎসবেও তার ছোঁয়া আসা স্বাভাবিক। এবারের পুজোয় সেই ছোঁয়া শুধু আলোকসজ্জা বা সাউন্ড সিস্টেমেই নয়, বরং প্রতিমার চোখের ভঙ্গি থেকে শুরু করে প্যান্ডেলের প্রতিটি ইট-পাথর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।