৯ বছর পর বাংলাদেশের হাইকমিশনারের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে মমতা

কলকাতা: ন’বছরের দীর্ঘ ব্যবধানের পর, কোনও বাংলাদেশের হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সোমবার বিকেল ৫টা নাগাদ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসছেন…

Six SSC-Sacked Teachers Reach Kalighat to Meet CM Mamata Banerjee, Stopped by Police

কলকাতা: ন’বছরের দীর্ঘ ব্যবধানের পর, কোনও বাংলাদেশের হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সোমবার বিকেল ৫টা নাগাদ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসছেন নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের নবনিযুক্ত হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লা। এমনটাই জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে৷ এই সাক্ষাৎকে ঘিরে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়েছে।

এই বৈঠক যে নিছক ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ নয়, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কারণ, এই সাক্ষাৎপর্ব হচ্ছে এমন এক সময়, যখন কয়েক সপ্তাহ আগেই বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক কাছাড়ি বাড়িতে হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতি। সেই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। এমনকি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তিনি এ বিষয়ে চিঠিও পাঠান ১২ জুন।

   

সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। দেখা যায়, কাছাড়ি বাড়ির গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ছে হামলাকারীরা। বাড়ির অভ্যন্তরে চালানো হয় ভাঙচুর। অভিযোগ ওঠে, ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার হয়েছে বিশ্বকবির স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনা। যদিও পরে বাংলাদেশের প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, এটি মৌলবাদী হামলা নয়, বরং দুই স্থানীয় গোষ্ঠীর বিবাদের ফল।

এই প্রেক্ষিতে হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। নবান্ন সূত্রে খবর, হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই ঘটনার ‘প্রকৃত তথ্য’ তুলে ধরবেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যেকোনও ধরনের ভুল বোঝাবুঝি বা মনমালিন্য মেটাতে আগ্রহী তারা। ফলে এই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তাও নিহিত রয়েছে।

এছাড়াও, সম্ভাবনা রয়েছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সীমান্ত এলাকা থেকে বাংলাদেশে পুশব্যাক সংক্রান্ত ইস্যু নিয়েও আলোচনা হতে পারে মুখ্যমন্ত্রী ও হাইকমিশনারের মধ্যে। কারণ, ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিতর্কের মধ্যে মানবিক দিকটি নিয়ে বহুবার সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisements

বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশ মূলত একটি কৌশলগত বার্তা দিতে চায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু ভারতীয় নন, তিনি বাংলাদেশেও জাতীয় কবির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। তাঁর স্মৃতিসম্পন্ন স্থানে হামলার ঘটনায় ভারতের মানুষের ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া যে বাংলাদেশ সরকার গম্ভীরভাবে নিয়েছে, সেই ইঙ্গিতও এই সাক্ষাৎ বহন করে।

অন্যদিকে, এই সাক্ষাৎ এক নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে বলেও মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক বন্ধন অত্যন্ত গভীর। তাই, এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংবেদনশীল ও সহানুভূতিশীল কূটনীতি দুই দেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে সাহায্য করবে।

সার্বিকভাবে, ন’বছর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনও বাংলাদেশের হাইকমিশনারের এই সাক্ষাৎ নিঃসন্দেহে দুই বাংলার সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হিসেবে বিবেচিত হতে চলেছে। এখন দেখার, এই আলোচনার ফলে কতটা ইতিবাচক অগ্রগতি হয় ভবিষ্যতের ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে।