ট্যাব কেলেঙ্কারি নিয়ে যখন রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড় ঠিক তখনই এই বিষয়ে মুখ খুললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee On Tab Scam)। বর্তমানে জেলা থেকে শহর সর্বত্র রাজ্য সরকারের পাঠানো ট্যাব কেনার টাকা গায়েব হওয়ার খবর মিলছে। কোথাও একজন পডুয়ার প্রাপ্য টাকা চলে গেছে অন্যের অ্যাকাউন্টে। তো কোথাও আবার এ রাজ্যের সরকারি প্রকল্পের টাকা চলে যাচ্ছে ভিনরাজ্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
ট্যাব কেলেঙ্কারির এই কাণ্ডে একের পর এক গ্রেফতারিও করছে পুলিশ। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নবান্নে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার-সহ অন্যান্য আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠকও করে সিট গঠন করেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। এদিকে ২ দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে ফেরার সময় বিমান ধরার আগে ট্যাব কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী।
দিল্লি কংগ্রেসে বড় ধাক্কা, তিনবারের বিধায়ক বীর সিং ধিংগান যোগ দিলেন কেজরিওয়ালের দলে
ট্যাব কেলেঙ্কারির ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনকে দায়ী করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন, “ট্যাব কেলেঙ্কারি নিয়ে সিট গঠন করা হয়েছে, এটি প্রশাসনের কাজ। প্রশাসনকে তাদের কাজ করতে দিন।” সেইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “এই ঘটনা মহারাষ্ট্র, রাজস্থান-সহ একাধিক রাজ্যে ঘটেছে। আমরাই একমাত্র এই গ্রুপের ৬ জনকে ধরতে পেরেছি।
আমাদের প্রশাসন যথেষ্ট স্ট্রং। রাফ অ্যান্ড টাফ। ৬ জনকে গ্রেফতার করেছি। বাকি যা করার ওরা করবে। এটা প্রমাণিত যে আমাদের প্রশাসন অত্যন্ত শক্তিশালী।” তিনি আরও জানান, এই মামলায় ইতিমধ্যেই ছ’জন গ্রেফতার হয়েছে এবং যারা ট্যাবের টাকা পাননি, তারা অবশ্যই টাকাটি পেয়ে যাবে। গত কয়েকদিনে রাজ্যে ট্যাব কেলেঙ্কারি নিয়ে চরম অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।
মোদির কেন্দ্রে প্রেগন্যান্ট বিপুল অবিবাহিত মহিলা, সরকারি রেকর্ড ঘিরে চাঞ্চল্য বারানসীতে
একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রদের জন্য রাজ্য সরকার ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করেছিল, যাতে তারা ট্যাব কিনতে পারে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে যে, অনেক ছাত্রের অ্যাকাউন্টে সেই টাকা জমা হয়নি এবং তা অন্যের অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, ১৫টি জেলার অন্তত ১৩৫০ ছাত্র এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
এদিকে, পুলিশ প্রশাসন এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং ইতিমধ্যেই সিট গঠন করেছে কলকাতা ও মালদহ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে। ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ধৃতদের থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের দাবি, এই জালিয়াতি চক্রটি উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া এবং তার আশপাশের এলাকায় শুরু হয়েছিল এবং অনেক ভাড়া করা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা তোলা হয়েছিল। এছাড়া কিছু অ্যাকাউন্ট ব্লক ও ফ্রিজ করা হয়েছিল, যাতে প্রতারণার চিহ্ন অদৃশ্য হয়ে যায়।
শুক্রে কলকাতায় উর্দ্ধমুখী সোনা, কত দাম রয়েছে রূপোর?
ট্যাব কেলেঙ্কারির তদন্তে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া গ্যাংয়ের সম্ভাব্য যোগের কথা তুলে ধরেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি দাবি করেছেন, “যে ধরনের প্রতারণা ঘটেছে, তাতে জামতাড়া গ্যাংয়ের হাত থাকতে পারে। বিহারের কিছু অ্যাকাউন্টে টাকা চলে গিয়েছে। তাই এর সঙ্গে জামতাড়া গ্যাংয়ের সম্পর্ক থাকতে পারে।” পুলিশের মতে, এই জালিয়াতি চক্রটি শুধু রাজ্য নয়, বরং ভিন রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বিহারের কিষানগঞ্জ, মধ্যপ্রদেশের রায়পুরসহ একাধিক শহরে এই চক্রের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত রয়েছে। পুলিশ জানাচ্ছে, সাইবার প্রতারণার জন্য ভিন রাজ্যের সাইবার অপরাধীদের সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। রাজ্য প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে এবং দ্রুত এই কেলেঙ্কারি ফাঁস করার চেষ্টা করছে। সরকার ও প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, যেসব ছাত্ররা ট্যাবের টাকা পাননি, তারা নির্দিষ্ট সময়ে তাদের টাকা পেয়ে যাবে এবং সেইসঙ্গে এখন তদন্তও চলছে।