দু’জনের নাম বাংলায় বাদ দিয়ে দেখাক, বাকীটা বুঝে নেব’, হুঙ্কার অভিষেকের

এদিন সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন ফেলে দেন। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচন…

দু’জনের নাম বাংলায় বাদ দিয়ে দেখাক, বাকীটা বুঝে নেব’, হুঙ্কার অভিষেকের

এদিন সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন ফেলে দেন। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্যে যে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) প্রক্রিয়া শুরু করেছে, সেটি আসলে একপ্রকার “সাইলেন্ট ইনভিসিবল রিগিং”, অর্থাৎ নিঃশব্দে এবং অদৃশ্যভাবে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নির্বাচন কমিশনের এই এসআইআর অভিযান বিজেপির পক্ষে একপেশে কাজ। তারা ভোটার তালিকা থেকে এমন নাগরিকদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে, যারা সচেতনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলে।” তাঁর মতে, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে।

   

তিনি আরও বলেন, “বাংলায় এসব করে কোনও লাভ হয়নি। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে মানুষ বিপুলভাবে তৃণমূলকে সমর্থন জানিয়েছেন। এবার বিহারেও মানুষ ঠিক একইভাবে জবাব দেবে বলে আমি আশা করি। নির্বাচন কমিশন ও বিজেপির এই আঁতাঁতের বিরুদ্ধেই মানুষ ভোটে রায় দেবে।”

অভিষেকের বক্তব্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশন একযোগে বিরোধী রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে কাজ করছে। তাঁর কথায়, “২০২১ সাল থেকেই বাংলার মানুষের সঙ্গে বিমাত্রিসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। আগে বাংলা সরকারের অর্থ আটকে দেওয়া হয়েছিল, এখন সরাসরি ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে। কেন্দ্র জানে, মানুষ যদি ভোট দিতে পারে, তাহলে তারা বিজেপিকে হারাবে। সেই কারণেই এই নেপথ্য চক্রান্ত।”

তিনি এই প্রসঙ্গে বিহারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিও টানেন। অভিষেক জানান, “বিহারেও বাংলার মতোই চেষ্টা করা হচ্ছে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়, ভাষিক গোষ্ঠী ও দরিদ্র ভোটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে। যাঁরা প্রতিবাদ করতে জানে, যাঁরা বিজেপির ভুল নীতির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলে, তাঁদেরই টার্গেট করা হচ্ছে। কিন্তু এই অন্যায় বরদাস্ত করবে না দেশের মানুষ।”

Advertisements

তাঁর দাবি, তৃণমূল কংগ্রেস শুধু বাংলার নয়, দেশের প্রতিটি রাজ্যের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের পাশে থাকবে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। অভিষেক বলেন, “একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান যদি এমন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে, তাহলে তা গণতন্ত্রের পক্ষে এক ভয়ানক সংকেত। আমরা সংসদে, রাস্তায়, আদালতে—সব জায়গায় এর প্রতিবাদ করব।”

তিনি এ-ও জানান, দল ইতিমধ্যেই বাংলার নানা এলাকায় বিশেষ টিম তৈরি করে ভোটার তালিকা পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। যাঁদের নাম বাদ যাবে, তাঁদেরকে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য দল প্রস্তুত।

এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, অভিষেকের এই মন্তব্য ভবিষ্যতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। বিজেপি এখনই এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিলেও, রাজ্যের গণতান্ত্রিক চেতনার প্রশ্নে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে এই প্রতিবাদ।

শেষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক শক্ত বার্তা দেন, “ভোট মানেই গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড। যে হাতেই তা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হোক না কেন, তৃণমূল তা প্রতিহত করবেই।”